রাজনৈতিক অস্থিরতা
পর্যটকশূন্য বান্দরবান
আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, দ্য রিপোর্ট : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে বান্দরবান। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা কাটলেও পর্যটন খাতের সংকট এখনো কাটেনি। পর্যটনের ভরা মৌসুমেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানসহ পাহাড়ি পর্যটন স্পটগুলো এক প্রকার পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে।
ফলে লোকসান গুনতে গুনতে বান্দরবানের হোটেল রূপসী বাংলাসহ কয়েকটি হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। মালিকানা পরিবর্তনের ঘটনাও ঘটেছে কয়েকটির। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে শুধু বান্দরবানে পর্যটন খাতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১১ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম জানান, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে পর্যটক কমেছে। নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যে পর্যটকদের ভ্রমণের সমস্ত আয়োজনের পরও পর্যটন স্পটগুলো জনশূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কিছুটা পর্যটকের আগমন ঘটছে। কিন্তু তা খুবই সামান্য।
জেলা পর্যটন হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, বান্দরবানে হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং পর্যটন স্পটগুলোর সংস্কার-রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিমাসে প্রায় তিন কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। বর্ষবরণ উৎসবকে ঘিরে প্রতিবছর জেলা সদরের ৪৫টি হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, শতাধিক ট্যুরিস্ট গাড়ি এবং পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকে ভরপুর থাকে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থায় এবার সবগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। লোকসানের কারণে হোটেল রূপসী বাংলা বন্ধ হয়ে গেছে। বান্দরবান গেস্ট হাউসসহ কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিকানা পরিবর্তন এসেছে। এভাবে আরও কিছুদিন চললে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের না খেয়ে মরতে হবে।
তাই পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকার এবং বিরোধী দলকে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পরিহারের দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, অক্টোবর-মার্চ পর্যটন মৌসুম। প্রতিবছর এ সময়ে বান্দরবানে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে পর্যটকরা ছুটে আসেন পাহাড়ে। ঢল নামে পর্যটন স্পটগুলোতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের। কিন্তু রাজনৈতিক অচলাবস্থায় এখন পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, স্বর্ণ মন্দির, শৈল প্রপাত, রিজুক ঝর্ণা, কিংবদন্তী বগালেক এবং নীলগিরিসহ বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো।
পর্যটন রিসোর্ট হলিডে ইন-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন জানান, দু’বছর ধরে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পর্যটন শিল্প। সহসা রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্তরণ না ঘটলে এ শিল্প সম্পূর্ণই ধ্বংস হয়ে যাবে। কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং রিসোর্টের আনুষঙ্গিক খরচ চালাতে কষ্ট হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
ট্যুর অপারেটর অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি ও বান্দরবান হিলসাইড রিসোর্টের মালিক হাসান মনসুর বলেন, ‘চলমমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের পর্যটন শিল্পের ক্ষতির পরিমাণ বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে এলেও এ ক্ষতি আগামী কয়েক বছরেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। বিশেষভাবে বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’
এদিকে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত পাহাড়িরাও। স্থানীয় ব্যবসায়ী থুইনকেল বম ও বনফুল টেক্সটাইলের মালিক মোহাম্মদ মিলন চৌধুরী জানান, দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন না থাকায় তাঁতের তৈরি পোশাক বিক্রি একদম কমে গেছে। তাঁত শিল্পটির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষ আর্থিক সংকটে পড়েছেন। বিক্রি না থাকায় উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতেও।
পরিবহন শ্রমিক মোহাম্মদ সুমন জানান, পর্যটকবাহী ৭০-৮০টি জিপসহ অন্যান্য গাড়ি রয়েছে। পর্যটক না আসায় এ সব গাড়ির শ্রমিকরাও ভীষণ কষ্টে আছে।
(দ্য রিপোর্ট/এএস/এনডিএস/সা/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৪)