খালেদা জিয়ারও বিচার হওয়া উচিত : শেখ সেলিম
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : চট্টগ্রামে উদ্ধার করা ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সম্পৃক্ততার দায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও বিচার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে মঙ্গলবার পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে শেখ সেলিম এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী আইন সবার জন্য সমান। তাই যদি হয় তাহলে, অস্ত্র চোরাচালানির দায়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের বিচার হলে কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিচার হবে না? তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অধীনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও চলে। প্রধানমন্ত্রী ডিজিএফআই ও এনএসআই’র মতো রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দুটিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ব্যতীত এনএসআই এক পা এগুতে পারে না। তাহলে নিশ্চয় এ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র চোরাচালানের ব্যাপারে খালেদা জিয়াও জানতেন।’
৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, এনএসআই’র শীর্ষ কর্মকর্তা, ভারতের উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়াসহ মোট ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আদালত।
এ রায়কে যথার্থ উল্লেখ করে শেখ সেলিম বলেন, ‘ভারতে বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠন উলফার জন্য আনা এ অস্ত্রের অর্থদাতা ছিল পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আইএসআই’র টাকায় কেনা এ অস্ত্র বাংলাদেশ হয়ে ভারতের আসামে পাঠাতে চেয়েছিল তারা। এ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র চোরাকারবারীর ঘটনা উপমহাদেশে আগে কখনো ঘটেনি।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘যখন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই) অস্ত্র চোরাচালানিতে জড়িত থাকে তখন দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা কোথায় থাকে? উলফাকে সহযোগিতা করতে এবং বাংলাদেশকে চোরাকারবারীর ট্রানজিট বানানোর জন্য এ ১০ ট্রাক অস্ত্র আনা হয়। যদি তারা সফল হতো তাহলে আজ বাংলাদেশ ভারত ও আন্তর্জাতিক মহলের টার্গেটে হয়ে থাকত। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ত। এ অস্ত্র যে শুধু উলফাই ব্যবহার করত, বাংলাদেশের অস্তিত্ব নস্যাৎ করতে ব্যবহার করা হত না তার নিশ্চয়তা কোথায়?’
তিনি বলেন, ‘১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের পর যখন তৎকালীন ডিজিএফআই’র চিফ প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানালেন, তখন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চুপচাপ ছিলেন। এতে প্রমাণিত হয় এ অস্ত্র চোরাচালান সম্পর্কে খালেদা জিয়া জানতেন এবং তার মদদেই এ ঘটনা ঘটেছিল।’
আওয়ামী লীগের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় যে রায় দেওয়া হয়েছে তাতে প্রমাণিত হয়েছে, অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের অবশ্যই আইনের অধীনে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার মতো ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও জজ মিয়া সাজানো হয়েছিল। রায় প্রকাশের পর তিনি (খালেদা জিয়া) বলছেন, যারা অস্ত্র ধরেছে তাদের বিচার করা হয়েছে। এটা সত্য যারা অস্ত্র ধরেছিল খালেদা জিয়ার সরকার তাদেরই শাস্তি দিয়েছে। আর আমরা এ অস্ত্র চোরাচালানে জড়িতদের শাস্তি দিয়েছি।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘এর আগেও ১৯৯১ সালে কক্সবাজারের চকোরিয়ায় দুই ট্রাক অস্ত্র আটক হয়েছিল। বিএনপির সেই ৬ বছরে এ দুই ট্রাক অস্ত্র কোথায় গেল? এ অস্ত্র কি আওয়ামী লীগকে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকে ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আর উলফাকে দিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র করতে চেয়েছে। এ অস্ত্র কাকে দেওয়া হলো তার জবাব খালেদা জিয়াকে দিতে হবে।’
(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ-এইচআর/এনডিএস/এনআই/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৪)