দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জড়িত থাকার ব্যাপারে তদন্তের পর বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে মঙ্গলবার পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা চলাকালে রেফারেন্স হিসেবে এসেছে হাওয়া ভবন জড়িত। তার মানে বিএনপি নেত্রী, তার পুত্র এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তখন অস্ত্র উদ্ধারে যারা সহায়তা করেছিল তাদের আসামি করে বিচার শুরু করে বিএনপি সরকার। এ সব অস্ত্র যে পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার করল তাদের চাকরিচ্যুতসহ মামলা দিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করল। কিন্তু এ মামলা পরবর্তী সময়ে শুরু হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তখন এ মামলার পুনর্তদন্ত শুরু হয়। এরপর এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, মামলাও শেষ হয়েছে। মামলার সাক্ষীতে হওয়া ভবন ও বিএনপি নেত্রীর নাম চলে আসে। মামলা শেষ হয়েছে কিন্তু এই যে অস্ত্র পাচার হচ্ছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে, কেন করা হচ্ছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত তার একটা তদন্ত হতে পারে, তার একটা তদন্ত করা হবে। আর এ সব ঘটনার সঙ্গে বিএনপি নেত্রী জড়িত হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করা দরকার এবং আমরা তা করব। অস্ত্র কোথা থেকে আসলো, কে আনল, কে টাকা দিল এ সব বিষয়ে তদন্ত করা হবে। নতুন ভাবে তদন্ত করে এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ যেন পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র লীলাখেলার জায়গায় পরিণত হলো। এ দেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে যে সব ঘটনার বিচার তো দূরের কথা মামলাও হয়নি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করা, তাদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা, সংসদ সদস্য বানানোর ঘটনাও ঘটেছে। আর এ সব খেলা জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এরশাদ কম খেলেননি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিএফআই, এনএসআই সরকারের প্রতিষ্ঠান। সরকারের নির্দেশেই তারা কাজ করে। তাদেরকে যদি ওইগুলোর সঙ্গে জড়িত করা হয় তাহলে দেশের নিরাপত্তা থাকে কোথায়। যখন ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার করা হলো তখন তৎকালীন ডিজিএফআই’র ডিজি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানান। বিষয়টি শুনে তিনি চুপ ছিলেন। এর মানে মৌনতায় সম্মতির লক্ষণ, যা হচ্ছে তা হতে দাও। তাই কোনো সংস্থার নাম পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাজ নিয়ন্ত্রণ করলেই চলবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিকে সব সময় ব্যবহার করা হয়েছে আশপাশের দেশগুলোতে যেসব বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন রয়েছে তাদের অস্ত্র যোগান দেওয়া, তাদের এখানে রাখা, লালন-পালন করা এবং তাদের ট্রেনিং দিয়ে বিচ্ছিন্নবাদী আন্দোলনে ব্যবহার করার কাজে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ভারতের যে সাতটি অঙ্গরাজ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলত সেই কর্মকাণ্ডকে বিএনপির নেত্রী সমর্থন দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এ সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করে অর্থাৎ তিনি আখ্যায়িত করেন। বিষয়টি হলো ভারত বনাম পাকিস্তানের বিষয়। পাকিস্তান আমলে আইএসআই বাংলাদেশে হয়ে ভারতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করত। কিন্তু আমরা তো পাকিস্তানকে পরাজিত করেছি। তাহলে এখন কেন আমাদের দেশের মাটি অন্য রাষ্ট্রের মধ্যকার খোঁচাখুঁচিতে সাহায্য করব।’

‘বিডিআর বিদ্রোহ’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাসের মাথায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। কিন্তু আশ্চার্যজনক হলো যেদিন বিডিআর বিদ্রোহ ঘটল সেদিন খুব সম্ভব সকাল ৭টা কিংবা ৮টার দিকে বেগম খালেদা জিয়া তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে পুলিশ প্রটোকল না নিয়ে একা একা বের হয়ে গেলেন এবং আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেলেন। এর কিছু সময় পর বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হয়। এমনভাবে বিদ্রোহটি ঘটেছিল যেন দেশে একটা গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে। এখন প্রশ্ন হলো, কেন বিএনপি নেত্রী বিদ্রোহ শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে বাসা থেকে বের হলেন? তিনি কিসের আসায় ছিলেন? এ বিষয়েও ভাবা প্রয়োজন।’

(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ-এইচআর/এনডিএস/ এনআই/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৪)