দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে ফেব্রুয়ারি মাসকে শোকের মাস আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘এই মাসের ২৫ ফেব্রুয়ারি (২০০৯ সাল) পিলখানায় ৫৭ জন চৌকস ও মেধাবী সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সেই শোকাবহ দিনে ঢাকায় এশিয়া কাপ ক্রিকেটের উদ্বোধন উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ নাচ-গানের অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা আমরা শুনেছি। বেদনাবিধুর ওই দিনটিতে কোনো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান না করার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে মঙ্গলবার বিকেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসন এ সময় অবিলম্বে হত্যা, গুম, উৎপীড়ন ও বিরোধী দল নির্মূলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর যে সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও দাবি জানান তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাকে গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করা যায়। কিন্তু বিনাবিচারে হত্যা করলে সেই খুনের বিচার হতে হবে। তিনি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের অপহরণ ও গুম বন্ধ করতে হবে। গুমের ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দেওয়ার জন্য আমি দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও মিছিলের ওপর থেকে সকল বিধি-নিষেধ অবিলম্বে তুলে নিতে হবে।’

দমন-পীড়ন বন্ধ করে সকল বন্ধ সংবাদমাধ্যম খুলে দিয়ে আটক সাংবাদিকদের মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

১৯ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, ‘জনগণ-বর্জিত প্রহসনের নির্বাচন থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের স্থাবর সম্পদ, বাড়ি-ঘর ও উপাসনালয়ে হামলার সুপরিকল্পিত ঘটনা ঘটাচ্ছে সরকার। এ সব ঘটনার ব্যাপারে বিএনপির উদ্যোগে গঠিত নাগরিক তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এ সব ন্যক্কারজনক ঘটনাকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানির অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসে লিপ্ত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের একের পর এক জেল থেকে মুক্ত করার ঘৃণ্য ও ভয়ঙ্কর প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।’

খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ও ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে, অবাধ যে হত্যালীলা চলছে আমি সে দিকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সকল মানবাধিকার সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমি আজ দেশবাসীকে জানাতে চাই, বিএনপি একদলীয় বাকশালী স্বৈরশাসনের ধ্বংসস্তূপ থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র এনেছে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পুনর্জন্ম দিয়েছে। স্বৈরাচার হটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। জনগণের সমর্থনে বারবার দেশ পরিচালনায় অভিজ্ঞ বিএনপি জানে কোন পরিস্থিতিতে কী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন কৌশল ও কর্মপন্থা নিরূপণ করেই বিএনপি এগিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি ও ইতিহাস সম্পর্কে আমার যতটুকু জ্ঞান আছে তা থেকে বুঝি যে, আজকের সভ্য পৃথিবীতে দু-একটি সার্টিফিকেট জোগাড় করে এই অন্যায় ও অবৈধ শাসনকে প্রলম্বিত করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন এই স্বৈরাচার ও স্বেচ্ছাচারকে মেনে চলবে না। আমরাও অনির্দিষ্টকাল ধরে শুধু সংলাপ ও সমঝোতার আহ্বান জানিয়েই যাব, এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই। তাই সময় থাকতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আবারও আহ্বান জানাচ্ছি।’

(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/এমএআর/এনআই/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৪)