‘সারাদেশে ৩০০ হত্যা-গুম’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিএনপির চলমান আন্দোলনে গত বছর ২৬ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে বিরোধী দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে সরকার বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মঙ্গলবার বিকালে হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।
হত্যা-গুমের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় যৌথবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মোট চারজন থানা পর্যায়ের নেতা।
দিনাজপুর জেলায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। নীলফামারীতে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীসহ ছয়জন নিহত ও নয়জন গুম হয়েছেন। লালমনিরহাটে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের চার নেতাকর্মীসহ মোট ছয়জন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
রংপুরে যৌথবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন।কুড়িগ্রামে দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
আওয়ামী সন্ত্রাসী ও যৌথবাহিনীর গুলিতে গাইবান্ধায় নিহত হয়েছেন ছয়জন। এদের বেশিরভাগই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। গুম হয়েছেন বিএনপির দুজন নেতাসহ ১১ জন।
জয়পুরহাট জেলায় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও যৌথবাহিনীর গুলিতে ১২ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন।
বগুড়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও যৌথবাহিনীর গুলিতে জাতীয়তাবাদী যুবদলের তিন নেতাকর্মীসহ নিহত হয়েছেন পাঁচজন। স্থানীয় বিএনপির সাত নেতাকর্মীসহ ১৯ দলীয় জোটের ১৩ জন নিহত হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।
নওগাঁয় নিহত হয়েছেন বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের এক নেতাসহ ১৯ দলের দুজন।
রাজশাহী পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদকসহ জেলায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন দুই ছাত্রনেতা।
নাটোরে নিহত হয়েছেন দুই ছাত্রদল ও যুবদলের স্থানীয় নেতা।
বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের স্থানীয় সাত নেতাকর্মীসহ সিরাজগঞ্জ জেলায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে ১৪ জন নিহত হয়েছেন।
পাবনা জেলায় বিএনপি ও যুবদলের থানা পর্যায়ের ছয় নেতা-কর্মীসহ সাতজন নিহত হয়েছেন যৌথবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে।
মেহেরপুরে যৌথবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত সাতজনের মধ্যে ছয়জন বিএনপি ও যুবদল নেতা। অপরজন জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির তারেক মোহাম্মদ সাইফুল হক।
কুষ্টিয়ায় জেলা বিএনপির চার গুরুত্বপূর্ণ নেতা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
যৌথবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিএনপির এক নেতাসহ ১৯ দলের দুজন নিহত হয়েছেন চুয়াডাঙ্গায়।
ঝিনাইদহে যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৯ দলের একজন। আর দুজন গুম হয়েছেন।
ছাত্রদলের জেলা সহ-সভাপতি কবির হোসেন পলাশ ও থানা পর্যায়ের এক যুবদল নেতাসহ মোট চারজন যৌথবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন যশোর জেলায়।
মাগুরা ও বাগেরহাট জেলায় ছাত্রদল ও যুবদলের দুই নেতাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বিএনপি ও ছাত্রদলের স্থানীয় পর্যায়ের চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে খুলনা জেলায়। গুম হয়েছেন একজন।
সাতক্ষীরায় বিএনপি ও যুবদলের পাঁচ নেতাসহ ২৭ জন যৌথবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গুম করা হয়েছে তিন বিএনপি নেতাসহ ছয়জনকে। যারা নিহত ও গুম হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় নেতাকর্মী।
পটুয়াখালীতে এক বিএনপি নেতা ও পিরোজপুরে ১৯ দলীয় জোটের এক কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে এক বিএনপি নেতাকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে এবং মুন্সীগঞ্জে যৌথবাহিনী গুলি করে ছাত্রদলের এক নেতাকে হত্যা করেছে।
ঢাকা মহানগরীতে গত এক মাসে কেবল বিএনপি এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ২১ নেতাকে বিভিন্ন স্থান থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে এবং পরে তাদের গুম করে ফেলেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, সিলেটে গুম হয়েছে ছাত্রদল নেতাকর্মীসহ তিনজন। কুমিল্লা জেলায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের তিন নেতাকর্মীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। গুম করা হয়েছে লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম হিরু ও লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন পারভেজকে।
চাঁদপুর জেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছেন ১৯ দলের মোট ২৩ জন। এর মধ্যে ২১ জনই বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও শ্রমিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মী।
ফেনীতে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের পাঁচ নেতাকর্মীসহ নয়জন যৌথ বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছে। নোয়াখালীতে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাসহ ১৯ দলের ১১ জন নিহত হয়েছে।
১৯ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, লক্ষ্মীপুরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়াবহ তাণ্ডবে ২০ জন নিহত হয়েছেন। তারা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতা। গুম করা হয়েছে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ জুয়েলসহ দুজনকে।
চট্টগ্রাম জেলায় এক মাসে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের আট নেতাকর্মীসহ ১৫ জন যৌথ বাহিনীর গুলি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছেন। গুম করা হয়েছে তিনজনকে।
বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের ১৭ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে কক্সবাজার জেলায়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আরও বলেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের এভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে বিনা বিচারে হত্যা ও গুম একটি সভ্য সমাজে চলতে পারে না। তিনি বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি বিকালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে তাকে র্যাবের হাতে দেওয়া হয়। র্যাব তাকে পল্টন থানায় হস্তান্তর করে। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন রাতে থানায় গিয়ে তৌহিদের উপস্থিতিতে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। পরদিন তৌহিদকে পুলিশ পাহারায় তাদের গাড়িতে করে নোয়াখালী নিয়ে যায়। খোকন পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে তৌহিদকে আদালতে সোপর্দ করার অনুরোধ করেন। তা সত্ত্বেও তৌহিদকে গুলি করে হত্যা করে হাসপাতালে লাশ রেখে যায় পুলিশ।
তিনি বলেন, নীলফামারীর একজন সংসদ সদস্যের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত বিএনপির তিন নেতাকে যৌথবাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের লাশ পাওয়া যায়।
প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিরোধী দল আন্দোলন শুরুর পর থেকে গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিরোধী দলের ২৭৬ নেতাকর্মীকে হত্যা এবং আটকের পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৩৪ জন বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
তিনি আরও জানান, এ সময় গ্রেফতার করা হয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগের রাত থেকে দেশজুড়ে সহিংসতায় ৩১৫টি মামলা হয়েছে। এ সব মামলায় নামে-বেনামে আসামি করা হয়েছে ৬৩ হাজারেরও বেশি লোককে। চলতি মাসের ১০ দিনেই গ্রেফতার হয়েছে ২২ হাজারের বেশি লোক।
বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, দেশে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে কথিত সাদা পোশাকধারীদের তৎপরতা। তাদের এই তৎপরতার কারণে দেশে গুমের ঘটনা বেড়ে গেছে। তারা কখনও নিজেদের সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা র্যাব, কখনও বা ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দিলেও তারা আসলে কারা সে বিষয়টি বছরের পর বছর রহস্য হয়েই থাকে। এক সময় শুধু র্যাবের ওপর গুমের অভিযোগ আনা হলেও এখন ডিবি পুলিশের নামও ব্যবহার করতে শোনা যাচ্ছে।
(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/এমএআর/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৪)