স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য
বেপরোয়া হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অন্তত ৬০ হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বসবাস করছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের শরণার্থীরা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা দেশের অভ্যন্তরে মাদক, চোরাচালান, অস্ত্র পাচারসহ অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। রোহিঙ্গা বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে বুধবার বৈঠকে বসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত জাতীয় কৌশলপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, মিয়ানমার শরণার্থী এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নাগরিকদের বিষয়ে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হবে। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোসহ তাদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হবে। সে লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থা ও প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি জাতীয় কৌশলপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে আগমনের প্রেক্ষাপট, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আগমনের কারণসমূহ এবং অবৈধ মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশে বাংলাদেশে বিরূপ প্রভাবসমূহসহ বিভিন্ন বিষয়ে পৃথকভাবে চিহ্নিত করে কৌশলপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
জাতীয় কৌশলপত্রের তথ্য অনুসারে, রোহিঙ্গা মেয়েরা দীর্ঘদিন ধরে আফিম, ইয়াবা চোরাচালান পাচারে সহায়তা করছে। রোহিঙ্গাদের সামরিক সংগঠন এআরআইএফ, আরএসও, আর আরপি সহায়তায় নাফ নদী ও আশপাশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবার বড় চালান বাংলাদেশে সরবরাহ হচ্ছে। তারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। স্বল্পমূলে শ্রম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নষ্ট হচ্ছে, ক্ষুণ্ন হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। অন্তত ৬০ হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বসবাস করছে।
মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে আগমনের প্রেক্ষাপট :রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। নিজেদের নাগরিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে চাচ্ছে না মিয়ানমার। তাদের ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠির মধ্যে নেই রোহিঙ্গাদের নাম। ১৯৬৭ সালের দিকে রোহিঙ্গা জলদস্যু কাশেম রাজা তাদের রাজনৈতিক অধিকারের ব্যাপারে দেড় মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে সংগঠিত করার চেষ্টা করে। শুরু হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চরম নিপীড়ন। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বৌদ্ধ রাখাইনদের প্রতিহিংসা।
এই জনগোষ্ঠী ১৯৭৮ থেকে ’৭৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে রিফুজি হিসেবে আসতে শুরু করে। ওই সময় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। পরবর্তী সময়ে ১৯৯১-৯২ সালে অন্তত পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ওই সময় ইউএনএইচসিআর-এর সহযোগিতায় আশ্রয়স্থ দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু ২০০৫ সালে মিয়ানমারের সহিংসতায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হয়নি। এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের অনীহা রয়েছে বলেও জাতীয় কৌশলপত্রে বলা হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় অস্ত্রসহ এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার গভীর রাতে হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড় থেকে দেশে তৈরি এলজি বন্দুকসহ নূরুল আমিনকে (২৩) আটক করা হয়। নূরুল নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এইচ ব্লকের প্রয়াত আবদুল কাদেরের ছেলে। টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দিদারুল ফেরদৌস জানান, ডাকাতির প্রস্তুতির খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ এ ‘রোহিঙ্গা ডাকাতকে’ আটক করা হয়। এ সময় তার কাছে বন্দুক ছাড়াও একটি ছোরা পাওয়া গেছে।
শুধু নূরুল নয়, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজার জেলা ও এর আশপাশের এলাকার আইনশৃঙ্খলা অবনতির জন্য রোহিঙ্গাকে দায়ী করেছে পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় কৌশলপত্র প্রস্তুত করতে কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের একটি পাঠানো প্রতিবেদনে এ সব কথা বলা হয়।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ওপর পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন অপরাধমূলক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/এএস/এসবি/এএল/ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৪)