ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দস স্যান্তোস এভেইরো। যিনি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নামে সারাবিশ্বে পরিচিত। এ ফুটবলার ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্তুগালের মাদেইরা শহরের ফুঞ্চালে জন্মগ্রহণ করেন।
রোনালদোর বাবা জোসে দিনিস আভেইরো ও মা মারিয়া ডোলোরেস দস স্যান্তোস আভেইরো। বড় ভাই হুগো এবং বড় দুই বোন এলমা ও কাতিয়ার সাথে তিনি বেড়ে উঠেছেন। রোনালদো নামটি পর্তুগালে সচরাচর দেখা যায় না। তার বাবা-মা আমেরিকান রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগানের সঙ্গে মিলিয়ে এ নাম রাখেন।
রোনালদো ছয় বছর বয়স থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফুটবল খেলতে শুরু করেন। কৈশোরে তার প্রিয় দল ছিল ‘বেনফিকা’। যদিও তিনি তাদের প্রতিপক্ষ ‘স্পোর্টিং ক্লাব দ্য পর্তুগালে’ যোগদান করেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি ‘আন্দোরিনহা’ নামে একটি অপেশাদার দলে তার ক্রীড়াজীবন শুরু করেন, যেখানে তার বাবা কাজ করতেন। ১৯৯৫ সালে ১০ বছর বয়সের মধ্যেই পর্তুগালে তার সুনাম ছড়াতে থাকে। এরপর তিনি স্পোর্টিং দলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।
রোনালদো স্পোর্টিং এর অন্যান্য তরুণ খেলোয়াড়ের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেন। দলের পক্ষে তার অভিষেক খেলায় তিনি দুটি গোল করেন মোরেইরেন্সের বিপক্ষে। তিনি পর্তুগালের হয়ে উয়েফা অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছেন।
উয়েফা অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে তার কৃতিত্বের কারণে তিনি ফুটবল বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হন। লিভারপুলের সাবেক ম্যানেজার জেরার্ড হুলিয়ার ১৬ বছর বয়সের রোনালদোর দিকে আকৃষ্ট হন। কিন্তু লিভারপুল তাকে দলে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ তিনি ছিলেন খুবই কম বয়সী।২০০৩ সালের গ্রীষ্মে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের চোখে পড়েন রোনালদো। এরপর রোনালদোকে ১২.২৪মিলিয়নের (১৫মিলিয়ন) বিনিময়ে ইউনাইটেডে নিয়ে আসা হয়। ওল্ড ট্রাফোর্ডে বোল্টন ওয়ান্ডারার্সের বিরুদ্ধে ৬০তম মিনিটে পরিবর্তিত খেলোয়াড় হিসেবে ম্যানচেস্টারের পক্ষে অভিষেক হয় রোনালদোর। তিনি ৭ নাম্বার জার্সি গায়ে এই দলের পক্ষে খেলতেন। ২০০৪ সালে রোনালদো ইউনাইটেডের হয়ে প্রথম ট্রফি এফএ কাপজেতেন। তিনি অতিদ্রুতই ২০০৫ সালের২৯ অক্টোবর প্রিমিয়ার লীগে ইউনাইটেডের ১০০০তম গোল করেন। তিনি ২০০৫ সালে সকল প্রতিযোগিতায় ১০টি গোল করেন এবং ভক্তরা তাকে ২০০৫ ফিফা স্পেশাল ইয়াং প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত করেন।
রোনালদো ইংল্যান্ডে খেলা প্রথম খেলোয়াড় যিনি প্রধান ৪টি পিএফএ এবং এফডব্লিউএ পুরস্কার জিতেছেন। ২০০৭ সালে এ কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। রোনালদো ২০০৮ ও ২০১৩ সালে সারা বিশ্বে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতে নেন। তিনিই একমাত্র পর্তুগিজ যিনি এই পুরস্কার দুইবার জিতেছেন। ২০০৭ ও ২০০৯ সালেফিফা ব্যালন ডি’অরএবং ২০১১ ও ২০১২ সালেফিফা ব্যালন ডি’অরের দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। তিনি ২০০৮ ও ২০১১ সালে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন-সু পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৮ সালে তিনি ৪টি প্রধান পিএফএ এবং এফডব্লিউএ ট্রফির মধ্যে ৩টি জেতেন এবং ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার, ফিফা প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার, ওয়ার্ল্ড সকার প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার এবং ওনজে দ’অর অ্যাওয়ার্ড জেতেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে রোনালদোকে এফডব্লিউএ প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। রোনালদো ২০০৯ সালে সেরা গোলের জন্য প্রথম পুস্কাস অ্যাওয়ার্ড জেতেন।
২০০৯ সালের১১ জুন ৮০মিলিয়ন ইউরোতে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদ দলে যোগদান করেন।
রোনালদো শীর্ষ ইউরোপিয়ান লিগগুলোর মধ্যে প্রথম খেলোয়াড় যিনি পর পর দুই মৌসুমে ৪০টি গোল করেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে ১০০ লিগ গোল করেছেন এবং তিনিই প্রথম খেলোয়াড় যিনি লা লিগায় প্রতিটি দলের বিরুদ্ধে গোল করেছেন। এছাড়াও তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল ও লা লিগায় মিনিটপ্রতি সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডের অধিকারী। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তার ৩০০তম ক্লাব গোল পূর্ণ করেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তার ক্যারিয়ারের ৪০০তম গোল করেন।
রোনালদো পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে খেলেন। ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে কাজাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার অভিষেক ঘটে। তিনি জাতীয় দলের হয়ে ১০০-এর অধিক ম্যাচ খেলেছেন এবং যৌথভাবে পর্তুগালের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের অধিকারী। তিনি পর্তুগালের হয়ে প্রধান ৫টি টুর্নামেন্ট; ২০০৪ উয়েফা ইউরো, ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ, ২০০৮ উয়েফা ইউরো, ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০১২ উয়েফা ইউরোতে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৪ সালের উয়েফা ইউরোর প্রথম খেলায়, গ্রিসের বিরুদ্ধে তিনি তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেন। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে পর্তুগালের অধিনায়ক হন। ২০১২ সালের উয়েফা ইউরোতে অধিনায়ক হিসেবে দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে যান এবং প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোল করেন।
২০১৩ সালেও তিনি ফিফা ব্যালন ডি’অর পুরস্কার জেতেন।
(দ্য রিপোর্ট/এমএইচও/এমডি/এজেড/ফেব্রয়ারি ৫, ২০১৪)