‘আমাদের শিশুসাহিত্য উজ্জ্বল, মানবিক ও ঋদ্ধ’
লুৎফর রহমান রিটনের জন্ম ১৯৬১ সালের ১ এপ্রিল ঢাকায়। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ছড়াকার ও খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২০ টির মতো। লেখালেখির স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৭ সালে শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন। ছড়াকে ড্রইং রুম থেকে বের করে মহাসড়কে এনে মূল্যায়িত করেছেন তিনিই। ছড়া লিখেও যে তারকাখ্যাতি অর্জন করা যায় লুৎফর রহমান রিটন তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। শুধু ছড়াই নয়, ছোটদের জন্য গল্প, উপন্যাস ও গান রচনা করেও প্রশংসিত তিনি। টেলিভিশনে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ছাড়াও তার লেখা অনেক নাটক ও গান প্রচারিত হয়েছে। ২০০২ সাল থেকে সপরিবারে কানাডায় বসবাস করা রিটন প্রতি বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে প্রাণের টানে ছুটে আসেন বাংলাদেশে । দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আদিত্য রুপু
এবার মেলায় আপনার কয়টি আসছে? কোন প্রকাশনী বের করছে?
সবমিলিয়ে ৫টি বই আসছে। ৪টি ছোটদের ও ১টি বড়দের। এরমধ্যে ছোটদের ছড়ার বই ‘লিলিপুটের ছোটভাই’ ও বড়দের ছড়ার বই ‘জাগরণের ছড়া’ আনছে অনন্যা। অনার্য বের করছে গল্পের বই ‘ভূতের সঙ্গে দেখা হলো’ ও শেখ মুজিবকে নিয়ে ছড়ার বই ‘জয়বাংলা’। স্মৃতিকথার বই ‘টুকরো স্মৃতির মার্বেলগুলো’ আনছে বাংলাপ্রকাশ।
নতুন বই সম্পর্কে বলুন?
নতুন বই মানেই নতুন আনন্দ। এই আনন্দের সঙ্গে প্রতিবছরই সাক্ষাৎ হয়। এ বছর যে বইগুলো আসছে সেগুলোর প্রতি আলাদা একটা দরদ আছে। বইগুলোর পাণ্ডুলিপি থেকে বই হিসেবে রূপান্তর হওয়ার সময়টা পরিশ্রমের তবে উপভোগ্য। নতুন বই হাতে নিয়ে ঘ্রাণ নিলে প্রাণ ভরে যায় অপার মুগ্ধতায়।
বইকে কীভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বলে মনে করেন?
বইকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানো লেখকদের কাজ নয়, প্রকাশকদের। একজন প্রকাশকই পারেন একটি বইকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে। সব প্রকাশক অবশ্য এই কাজটি করছে না বা ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা দেখেছি, মূলধারার প্রকাশকরা তাদের প্রতিনিধিদের দিয়ে সারাদেশে বই বিপণন করে থাকেন। কোনো প্রকাশকের এক বা একাধিক প্রতিনিধি রয়েছে। প্রায় প্রতিটি জেলা শহরেই আমাদের বই পৌঁছে যাচ্ছে। একজন প্রকাশক তার মার্কেটিংটা ভালোভাবে করলে লাভটা তো তারই হচ্ছে। প্রথমসারির প্রকাশকদের মতো অন্যান্য প্রকাশকদেরও উচিত নিজেদের স্বার্থে বিপণন প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া।
বই কেনার পরিকল্পনা নিয়ে বলুন?
প্রতিবছরই মেলা থেকে প্রচুর বই কেনা হয় আমার। প্রচুর বই উপহার হিসেবেও পায়। খুব বেশি পরিকল্পনা করে বই কেনা হয় না। ভালো লাগলে সংগ্রহ করি।
বইমেলার স্থান সম্প্রসারণের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
খেয়াল করলে দেখবে, বাংলা একাডেমিতে একবারেই জায়গা হচ্ছিল না। এতো ক্রেতা-দর্শক, এতো প্রকাশক, এতো লেখক! দেখা গেল যে একজনের ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আরেকজন বই দেখছে। নতুন এই সিদ্ধান্তে এখন সেই অবস্থা দূর হয়েছে। এরকম মনোরম একটা পরিবেশ দরকার ছিল। যেখানে লেখক, পাঠকরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াবেন। ঘেটে ঘেটে প্রিয় বইটি কিনবেন। কেউ কেউ হয়তো বলার চেষ্টা করছেন মেলা বিভক্ত হয়েছে, ভুল। সময়ের প্রয়োজনে মেলাকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে মাত্র। বাংলা একাডেমীর এই সিদ্ধান্ত আগামীতে বইমেলাকে আরও রঙিন ও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
আমাদের শিশুসাহিত্য নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
আমাদের শিশুসাহিত্য নিয়ে আমি গৌরববোধ করি। আমাদের শিশুসাহিত্য উজ্জ্বল, মানবিক ও ইতিহাসঋদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের অন্যান্য শাখার সঙ্গে তুলনা চললেও বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য তুলনারহিত। আমাদের আছে বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন। আমাদের আছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। যার চিত্র আমাদের শিশুসাহিত্যের মূল উপজীব্য। দেশপ্রেম আমাদের শিশুসাহিত্যকে আলাদা করেছে মোটা দাগে। আমাদের আছে বরেণ্য সব লেখক।
ছোটদের জন্য কিছু বলুন?
ছোটরা বইয়ের ক্রেতা নয়, ছোটরা পাঠক। ক্রেতা হচ্ছেন বড়রা। আমি তাই ক্রেতা-অভিভাবকদের উদ্দেশে বলতে চাই- বইমেলায় বইয়ের আদলে আসলে অন্য অনেক কিছু বেরোয়। যেখানে বানান থেকে শুরু করে ইতিহাস ও জ্ঞান-বিজ্ঞানকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। আপনাদের সচেতন থাকতে হবে। আপনার শিশু যেন ভুলে ভরা বই না পড়ে, ভুল ইতিহাস না শেখে। অনেকের ধারণা শিশু কর্নারে থাকা রঙচঙা বই মানেই শিশুদের উপযোগী বই, এটাও ঠিক নয়। শিশু কর্নারে থাকা সব বই শিশুদের উপযোগী নাও হতে পারে। রঙচঙা বই দেখে বিভ্রান্ত না হয়ে আপনার নিজের শিশুর স্বার্থে বাড়তি মনোযোগী হতে হবে। একটি শিশু যেন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন চিন্তা-চেতনা ও সঠিক ইতিহাসের বইটি নিয়ে বাড়ি ফেরে।
(দ্য রিপোর্ট/এআর/এইচএসএম/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৪)