দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আপিল বিভাগে বুধবার পঞ্চম দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তার আইনজীবী।

মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন বিষয়ে আদালতে বুধবারও ৮ নাম্বার অভিযোগের বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান।

ওই অভিযোগে মানিক পসারীর বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন দেওয়া, তাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা ও মফিজের ওপর নির্যাতন এবং আশপাশের হিন্দু বাড়িতে আগুন দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এ সব অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।

পঞ্চম দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলার কার্যক্রম বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করে আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চে এই যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করা হয়।

আদালতে ৮ নাম্বার অভিযোগের বিষয়ে আগের দিন উপস্থাপিত যুক্তির ধারাবাহিকতায় বুধবার ৭ নাম্বার সাক্ষী মফিজ উদ্দিন পসারীর সাক্ষ্য খণ্ডন করে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান।

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মফিজ উদ্দিন যে জবানবন্দি দিয়েছেন তার একটি কথাও তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দিতে বলেননি।’

তিনি বলেন, ‘সকালে মহিষ চরাতে যাওয়ার কথা, সকাল ১০-১১টার দিকে গরু হাতালে নিয়ে আসার কথা, দেলু শিকদার কর্তৃক থাবা দিয়ে ইব্রাহীম কুট্টির চুল ধরে গালি দেওয়ার কথা, তাকে ও ইব্রাহীম কুট্টিকে এক দড়িতে বেঁধে রাখা, ইব্রাহীম কুট্টিকে ২-৪টি ঘা-গুতা মারা, মা বলে চিৎকার শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখি ইব্রাহীমকে গুলি করা, এর পর লাথি মেরে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া, ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে দানেশ মোল্লা ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেওয়ায় তার ঠোঁট কেটে যাওয়া এবং দাঁত ভেঙে যাওয়া, ক্যাম্পে রাজ্জাক রাজাকার কর্তৃক তাকে ভাত খাবা বলে জিজ্ঞেস করা, এর পর প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেওয়ার কথা বলার পর তাকে নিয়ে রাজ্জাক রাজাকারের বাইরে যাওয়া এবং তখন নদী পার হয়ে পালিয়ে যাওয়া, এর পর ফজরের সময় মানিক পসারীর সাথে দেখা হওয়ার পর তাকে সব ঘটনা খুলে বলার কথা তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দিতে বলেননি।’

অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান আরও বলেন, ‘মানিক পসারী পিরোজপুরে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে যে মামলা করেছেন, তাতে মফিজকে নির্যাতনের বিষয়ে একটি শব্দও উল্লেখ নেই এবং মফিজকে সে মামলায় সাক্ষীও করা হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের ৭ নাম্বার সাক্ষী মফিজউদ্দিন এ মামলায় একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। ৬ নাম্বার সাক্ষী মানিক পসারীদের বাড়িতে কাজ করতেন।’

‘মানিক পসারীর বাড়ি থেকে অপর কাজের লোক ইব্রাহীম কুট্টির সাথে তাকেও ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা করা হলেও সে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয় ক্যাম্প থেকে। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার ঘটনার সঙ্গে তার ওপর নির্যাতনের ঘটনাও জড়িত এবং সে এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী দাবিদার। কিন্তু একই ঘটনায় এরকম একজন ব্যক্তিকে মানিক পসারী তার পিরোজপুরের মামলায় সাক্ষী করেননি এবং তার বিষয়ে মামলায় কিছু উল্লেখও করেননি।’

‘শুধু তাই নয়; মফিজউদ্দিন পিরোজপুর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তার সাথে কোনো মিল নেই তার ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত জবানবন্দির সঙ্গে’- আদালতকে জানান আইনজীবী এস এম শাহজাহান।

২৮ জানুয়ারি থেকে সাঈদীর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন তার আইনজীবী এস এম শাহজাহান।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এমএআর/এজেড/ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৪)