দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আমিনুর রহমান সুলতান কবি, প্রাবন্ধিক ও ফোকলোর গবেষক। এ যাবৎ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ত্রিশের ওপর। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো- জলের সিঁড়িতে পা, ফিরে যাও দক্ষিণা চেয়ো না, চরের তিমিরে ডুবে যায় নদী, মৃন্ময় মুখোশ, পানসি যাবে না সাঁতার যাবে, সাধুর কর ইত্যাদি। প্রবন্ধগ্রন্থ : বাংলাদেশের কবিতা উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। শিশুতোষ গ্রন্থ : সিজন ও মাহীর প্রভাতফেরি, ভাষা আন্দোলনের কিশোর ইতিহাস ও ছোটদের বঙ্গবন্ধু। সম্পাদনা গ্রন্থ : শামসুর রাহমান স্মারকগ্রন্থ (শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে যৌথভাবে) ও উপেন্দ্রসংগীত। জীবনী গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘ভাষা সংগ্রামী গাজীউল হক, কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত, আশীষ কুমার লোহ, আলোকময় নাহা প্রমুখ। তিনি বাংলা একাডেমির গবেষণা ও ফোকলোর উপবিভাগে কর্মরত আছেন।

এবারের বইমেলায় তাঁর ভাবনার কথা জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৪ সম্প্রসারিত হওয়ায় একুশের চেতনার সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জাগরণ ঘটল নতুনভাবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণা কাজ করেছে। একুশের চেতনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিকশিত হয়েছে। ফলে একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে বাঙালি মানসে। আর এ কারণেই এবারের গ্রন্থমেলার পরিসর যেমন বেড়েছে, তেমনি চেতনাগতভাবেও ব্যাপ্তি ঘটেছে। একুশের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আশ্রিত স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে সংযোগ ঘটেছে তা অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে আরও মহিমান্বিত করেছে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণের সহজতর যোগাযোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী আন্ডারপাস বা ফ্লাইওভার তৈরির কথাও বলেছেন এবারের মেলা উদ্বোধনকালে। এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের অনেক সুবিধা হবে।

ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার গ্রন্থমেলার অভিজ্ঞতার আলোকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ওখানের মেলার সঙ্গে এ মেলার মিলের চাইতে অমিলতো কিছু থাকবেই। তবে বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে বলা যায় একই। কারণ এ মেলা পুস্তক প্রকাশক, বিক্রেতা, ক্রেতা ও দর্শনার্থীর মিলনমেলা।

অমিলের কথা বললাম এ কারণে যে, আমাদের একুশের গ্রন্থমেলা একুশের চেতনাকে ধারণ করে অব্যাহত আছে। আর এ বছর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ও ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের পাকসেনার আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে একুশের চেতনার সঙ্গে যোগ হয়েছে স্বাধীনতার চেতনা। বিহার বা কলকাতার বইমেলায় তেমন চেতনাগত বিষয়টি জড়িয়ে নেই। তবে তারা একটি দিক থেকে এগিয়ে আছে তা হলো- ক্রেতারা সারা বছর অপেক্ষা করেন মেলা থেকে সেরা ও বাছাই করা প্রয়োজনীয় বইগুলো সংগ্রহ করার জন্যে। তার জন্যে একটা বাজেটও করে রাখেন। এ ধরনের পরিকল্পনা আমাদের দেশের পাঠকদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। হাতে গোনা কয়েকজনের বই ছাড়া তেমন বই আর কত বিক্রি হয়।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ওখানকার বইমেলায় যে সব নতুন বই আসে সে সব বইকে আলাদা করে চেনা যায়। পুনর্মুদ্রণ, সংস্করণ জাতীয় বইকে ওখানে নতুন বই বলে চালিয়ে দেওয়া হয় না। কিন্তু দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ জাতীয় গ্রন্থকে আমাদের মেলায় নতুন প্রকাশনা হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়। অনেকে এ ধরনের বইয়ের খবর হিসেবেও ছাপিয়ে দেন।

চাকরিসূত্রেই দ্বিতীয়বারের মতো এ বছর লিটলম্যাগ চত্বরের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বপালন করায় লিটলম্যাগ চত্বরের বিন্যাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘এ বছর একাডেমির ভেতরে বয়রা ও কাঁঠালতলা এবং প্রেস ভবনের দক্ষিণ অংশ পুরো ফাঁকা থাকায় স্টল বিন্যাস সুচারুভাবে করা গেছে। ২০১৩ সালের চাইতে এবারে স্টলের আকারও বড় করা গেছে। স্টল সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও মেলা কমিটির সদস্য সচিব শাহিদা খাতুন বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।

এ বছর ৫৫টি স্টল নির্মাণ করা হয়েছে লিটলম্যাগ চত্বরে। আর এ চত্বরটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘একবিংশ’-এর সম্পাদক সদ্যপ্রয়াত কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেনকে।

একুশের গ্রন্থমেলায় আগামীদিনে বাছাই করা ও সেরা বইগুলো খুঁজতে পাঠকের অভাব হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আমিনুর রহমান সুলতান।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এপি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৪)