মাহফুজ স্বপন, দ্য রিপোর্ট : ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। এ নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোটার তালিকা স্থানান্তর বন্ধ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।  পাশাপাশি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের হলফনামাও প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

এ নিয়ে বুধবার কমিশন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিপুলসংখ্যক প্রার্থী ভোটার স্থানান্তরের আবেদন করায় আসন্ন নির্বাচনে ভোটার তালিকা নিয়ে গরমিল ও বিশৃঙ্খলা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কমিশন।

তবে ভোটার এলাকা স্থানান্তর বন্ধ করা হলে বেকায়দায় পড়বেন সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী। ইতোমধ্যে অনেক প্রার্থী নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ ও মাঠপর্যায়ের নির্বাচন অফিসে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করছেন। উপজেলা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করায় বেকায়দা পড়বেন বলে জানান অনেক প্রার্থী।

এ দিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য (হলফনামা) প্রকাশের জন্য বুধবার নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। পাশাপাশি নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো পরিপত্রে এ সব নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ ও জনগণের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেছিল ইসি। তারই ধারাবাহিকতায় ও হলফনামা প্রকাশের বিধান থাকায় এবারও তা প্রকাশ করার সিদ্ধন্ত নেয় কমিশন।

সংসদ নির্বাচনে হলফনামা প্রকাশ নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইসিকে হলফনামা প্রকাশ বন্ধের অনুরোধ জানায়। মন্ত্রী-এমপিদের অস্বাভাবিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে আওয়ামী লীগ।

এ অবস্থায় ইসির ওয়েবসাইট থেকে হঠাৎ হলফনামা গায়েব হয়ে যায়। এ নিয়ে ব্যাপক সমলোচনার মধ্যে পড়ে ইসি। বর্তমানে সম্পদের দুর্নীতি তদন্তে সাবেক ৬ মন্ত্রী-এপির হলফনামা চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে তদন্তও শুরু করেছে দুদক।

ইসির উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা স্ক্যান করে সিএমএস পদ্ধতিতে দ্রুততর সময়ের মধ্যে অবশ্যই প্রেরণ করতে হবে।

হলফনামার কপি সর্বসাধারণের অবগতির জন্য রিটার্নিং অফিসারদের উন্মুক্ত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে কেউ যদি লিখিতভাবে হলফনামার জন্য আবেদন করে তবে নিজ খরচে ফটোকপি করে নিতে পারবেন বলেও জানানো হয়।

সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে চিঠিতে ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী প্যানেল প্রস্তুত ও নিয়োগ, নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন, ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা চূড়ান্তকরণ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, মহিলা ভোটকক্ষের জন্য মহিলা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, নির্বাচনী এজেন্টদের নিয়োগ, যোগ্যতা ও নির্দেশনা প্রদান, নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ বাতিলকরণ, পোলিং এজেন্ট নিয়োগ ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিতকরণ, নির্বাচনী এজেন্ট এবং পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান।

কমিশন থেকে পাঠানো অপর এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীর কেউ মৃত্যুবরণ করলে অবশিষ্ট প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন, ভোটের সময়, দিনক্ষণ ও স্থান নির্ধারণ করে জনসাধারণকে অবহিতকরণ, প্রিসাইডিং অফিসাররা সরাসরি ইসিতে ডাকযোগে ফলাফল প্রেরণ, ভোটকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা, বন্ধ ঘোষিত ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণ, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার, নির্বাচনী দ্রব্যাদি সংরক্ষণ ও সরবরাহ এবং ব্যালট পেপার যাচাইসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বুধবার উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০১৩-এর সংশোধনী কপি রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছেন ইসির উপ-সচিব মু. আব্দুল ওদুদ।

আগামী সপ্তাহ থেকে ভোটার স্থানান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত করতে যাচ্ছে কমিশন।

এ স্থানান্তর প্রক্রিয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত অনুমোদন পেলে আগামী ৬ মে পর্যন্ত এ স্থানান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। নির্বাচন শেষে স্থানান্তর প্রক্রিয়া আবার শুরু করা হবে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএস/এনডিএস/এজেড/ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৪)