মাশুকুর রহমান রিফাত, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : এবার পুলিশের উপ-পরিদর্শকের (এসআই) মেয়ের বাল্যবিয়ে ঠিক হয়েছে এক কনস্টেবলের সঙ্গে। ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দর্শনা বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার কেয়ার বিয়ে ঠিক করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা বাবা মিজানুর রহমান।

একমাত্র অপ্রাপ্ত বয়স্ক এই মেয়ের সঙ্গে কনস্টেবল শামীমের বিয়ের দিন ঠিক করেন বৃহস্পতিবার। শামীম দামুড়হুদা উপজেলার পরকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের জিরাট গ্রামের মান্নান হোসেনের ছেলে।

এদিকে বিয়ের দিন ঠিক হলেও কনের বয়স নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। দর্শনার স্থানীয়া এ বিয়েকে বাল্যবিয়ে দাবি করেছে। শুধু দর্শনা নয়, জেলাজুড়ে এ বিয়ে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। অনেকেই জেলা লোকমোর্চা নেতৃবৃন্দকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করেছেন।

বিয়ের আয়োজনে দর্শনা তদন্ত কেন্দ্র ও আশপাশের এলাকা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকৃতির গেটও। এ ঘটনা জানার পর জেলা লোকমোর্চার সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধি দল দশর্নার বিয়ের স্থল পরিদর্শন করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চার সভাপতি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে মেয়ের বাবা এসআই মিজানুর রহমানকে বাল্যবিয়ের বিষয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি মনে করিয়ে দেন।

কনের বাবা মেয়ের বয়স ১৮ বছরেরও বেশি দাবি করে লোকমোর্চার প্রতিনিধি দলকে বলেন, ‘মেয়েটি এক সময় মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। যে কারণে পাঁচ বছর সাধারণ পড়াশোনা করতে পারেনি।’ তিনি লোকমোর্চার প্রতিনিধি দলকে খুলনার দীঘলিয়া থানার গাজীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ স্বাক্ষরিত মেয়ের জন্ম সনদ দেখান। জন্মসনদে গ্রামের বাড়ি ওই ইউনিয়নের মুসলিমডাঙ্গা এবং মেয়ের জন্মতারিখ পহেলা জানুয়ারি ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ দেখানো হয়। জন্মসনদটি গত ১ ফেব্রুয়ারি সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন জানান, দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুর রহমান যে বিয়ের আয়োজন করেছেন তা নিয়ে বিতর্ক ওঠা স্বাভাবিক। কারণ মিজানুর রহমানের নিজের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি বিয়ে করেছেন ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে এবং বাচ্চা হয়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর পর । সে হিসেবে মেয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে। ১৮ বছরের নিচে কাউকে বিয়ে দেওয়া বর্তমান বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয়। তা ছাড়া আইনের লোক হয়ে বেআইনি কাজ করলে সাধারণ জনগণের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন- দৈনিক প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি ও জেলা লোকমোর্চার সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনি, নির্বাহী সদস্য মানিক আকবর, সদর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি সহিদুল হক বিশ্বাস, দামুড়হুদা উপজেলা লোকমোর্চার সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জেলা লোকমোর্চার সচিব শাহনাজ পারভীন শান্তি, সাবেক সচিব নুঝাত পারভীন ও সিডিএফএর সমন্বয়কারী আসমা হেনা চুমকী।

(দ্য রিপোর্ট/এমআর/এনডিএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৪)