থ্রিজির ভিড়ে পিছিয়ে পড়ছে ওয়াইম্যাক্স
তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) ইন্টারনেট সেবা দ্রুত প্রসার লাভ করায় পিছিয়ে পড়ছে তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রযুক্তি ওয়াইম্যাক্স। থ্রিজি চালুর মাধ্যমে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। আর প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির ইন্টারনেট সেবাদাতা (আইএসপি) প্রতিষ্ঠান বাংলালায়ন, কিউবি, ব্র্যাক বিডিমেইল এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।
দেশের ৬টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে ৫টি ইতোমধ্যে থ্রিজি ইন্টারনেট সেবা চালু করায় মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মোবাইল ফোনের (স্মার্ট) চাহিদা। পিছিয়ে পড়ছে ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির ইন্টারনেটের প্রচলন।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক সমিতির (বিএমপিআইএ) তথ্যমতে, গত বছর দেশে স্মার্টফোনের বিক্রি ২ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, যা আগের বছরের তুলনায়প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা মূল্যের হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়েছে তুলনামূলক বেশি।
বিএমপিআইএ সূত্র আরও জানায়, চলতি বছর শেষে দেশে স্মার্ট ও ফিচার (ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত) ফোন ব্যবহারের হার দাঁড়াবে যথাক্রমে ৯ শতাংশ এবং ৯১ শতাংশ। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ২ ও ৯৮ শতাংশ। মূলত থ্রিজি ও ই-কমার্সের কারণে স্মার্টফোন ব্যবহারের এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে বিএমপিআইএ মনে করছে।
ভারতভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাইবার মিডিয়া রিসার্চের (সিএমআর) পৃথক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশে স্মার্টফোনের আমদানি বেড়েছে ১৯৭ শতাংশ।
বিএমপিআইএর সাধারণ সম্পাদক ও সিমফোনির পরিচালক রেজওয়ানুল হক দ্য রিপোর্টকে বলেন, মূলত থ্রিজি আসার পর থেকে গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দেশে ই-কমার্সের বাজার দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। মোবাইল অপারেটরগুলো গ্রাহক টানতে থ্রিজিতে বিভিন্ন ধরনের সাশ্রয়ী প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পেতে গ্রাহকও ছুটছেন সেদিকে। এতে স্মার্টফোনের বিক্রি বাড়লেও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিউবি ও বাংলালায়নের মতো আইএসপি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ফারুক খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, থ্রিজি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা ওয়াইম্যাক্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অবশ্যই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। তবে আমি মনে করি না এটি আমাদের জন্য থ্রেড। নতুন কৌশলের মাধ্যমে আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করব।
কিভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, এখনও থ্রিজি সব জায়গায় পোঁছায়নি। যেসব জায়গায় থ্রিজি পৌঁছায়নি, সেসব জায়গায় আমরা আমাদের কার্যক্রম জোরদার করব।
ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে অজের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড বাংলাদেশ লিমিটেডের (কিউবি) প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মায়েদুর রহমান বলেন, থ্রিজি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একটি কৌশল রয়েছে, যা এখন প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ২০০৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে চারটি কোম্পানিকে ১৫ বছর মেয়াদি ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস একসেস (বিডব্লিউএ) লাইসেন্স বরাদ্দ দেয়। প্রতিটি লাইসেন্সের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২১৫ কোটি টাকা। কোম্পানি চারটি হচ্ছে- বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্স লি., অজের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড বাংলাদেশ লি. (কিউবি), ব্র্যাক বিডিমেইল নেটওয়ার্ক লি. এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত বিটিসিএল। এর মধ্যে বাংলালায়ন এবং কিউবি ২০০৯ সাল থেকে গ্রাহকসেবা প্রদান করে আসছে। ব্রডব্যান্ড সেবাদানকারী এই চারটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এ খাতে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
(দ্য রিপোর্ট/এএইচ/ডব্লিউএন/শাহ/ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৪)