দ্য রিপোর্ট খবর দিয়েছে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বান্দরবানে পাহাড় ও ফসলি জমি কেটে বনাঞ্চলসহ জনবসতির ভেতরে প্রায় অর্ধশত ইটভাটা গড়ে উঠেছে। আর এতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। রিপোর্টটিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কার পাশাপাশি বলা হয়েছে, ইটভাটাগুলোতে কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র ও সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বনাঞ্চল, জনবসতি ও প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে এ সব ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এ সব ভাটাতে জ্বালানির জোগান দিতে বনাঞ্চল উজাড় করে সংগ্রহ করা হচ্ছে কাঠ। আর ইট তৈরি করতে পাহাড় ও ফসলি জমির টপসয়েল কেটে মাটির উর্বরতা নষ্ট করা হচ্ছে।

বান্দরবানের এই চিত্রটি সারা বাংলাদেশেরই চিত্র বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। তবে সব জায়গায়ই যে আইনকানুন মানা হচ্ছে না, তা নয়। ক্ষেত্র বিশেষে নিয়ম মানলেও সমতল ভূমির উর্বরা জমির টপসয়েল কাটা এবং পাহাড়ি অঞ্চলের পাহাড় কাটার দৃশ্য একই। অর্থাৎ প্রতিবছর এই দেশের হাজার হাজার ভাটায় উর্বরা সরস মাটি পুড়িয়ে ইট বানানো হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সেই ইট আবার প্রতিবেশী দেশেও রফতানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাড়ি নির্মাণের অন্যান্য উপকরণ যেমন- টাইলস, দেশি টালি তৈরিতেও পুড়ছে এ দেশের সরস মাটি।

এককালে এ দেশের ‘পাল’ সম্প্রদায় গৃহস্থালির উপকরণ তৈরির কাজে প্রচুর মাটি ব্যবহার করত। তবে সে মাটি তারা উর্বর ভূমি থেকে সংগ্রহ করত না। ফলে দীর্ঘকাল যাবত কুটিরশিল্প হিসেবে মৃৎশিল্প টিকে থাকলেও আমাদের ভূমি চরিত্রে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেনি।

কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ব্যাপক নগরায়ণ এমনকি গ্রামগঞ্জে বসতবাড়ি নির্মাণে ক্রমবর্ধমান হারে যেভাবে ইটের ব্যবহার শুরু হয়েছে, তা শুধুমাত্র উদ্বেগের বললে কম বলা হবে।

বাংলাদেশ নামের এই গাঙেয় অঞ্চলটি পলিমাটি গঠিত। বলা যায়, আমাদের কৃষি সভ্যতার ভিত্তিভূমিই হলো এর সরস উর্বরা মাটি। আজ প্রয়োজনের দোহাই দিয়ে নির্বিচারে সেই মাটি পুড়িয়ে ‘কংক্রিট সভ্যতা’ গড়ে তোলা হচ্ছে। যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।

পৃথিবীর কোনো আধুনিক সভ্য জাতি নিজেদের এই ভয়াবহ ধ্বংসলীলা চেয়ে চেয়ে দেখত না। কিন্তু আমাদের লোভী নব্য শাসক ও ধনিক শ্রেণীর এই নির্বিচার ধ্বংসলীলার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো আওয়াজ নেই। এ ধ্বংসলীলা বন্ধে জাতির বিবেক যত দ্রুত জাগ্রত হবে, তত দ্রুতই আমরা ধ্বংসের হাত থেকে পরিত্রাণ পাব।