দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার নিয়মমতোই হলিউড, বলিউড ও ঢালিউডসহ বিশ্বের প্রায় সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করছেন পুরুষ পরিচালকরা। কালেভদ্রে যদিও কয়েকজন নারী পরিচালক দেখা যায়; কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় হারিযে যান তাদের অনেকেই।

যে সব নারী পরিচালক এ কথা বিশ্বাস করতে নারাজ তাদের সংখ্যা হয়তো এক বালতি পানির তুলনায় এক ফোঁটা পানি অথবা একটি রিলের মাত্র একটি ফ্রেমের সমান। তবুও হাতে গোনা এ কয়েকজন নারী পরিচালককে সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশে হলিউডের সেরা ১০ নারী পরিচালকের পরিচিতি দ্য রিপোর্ট পাঠকদের জন্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

ক্যাথরিন বিগলো

অবিশ্বাস্যকর চিত্রায়ন ও হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টিকারী অ্যাকশনের জন্য বিখ্যাত ক্যাথরিন বিগলো অস্কারের ইতিহাসে প্রথম নারী যিনি ২০১০ সালে তার পরিচালিত ‘দ্য হার্ট লকার’ ছবির জন্য সেরা পরিচালক হিসেবে অস্কার পুরস্কার অর্জন করেন। এ ছাড়াও তিনি বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসহ ‘স্ট্রেঞ্জ ডেইস’ ছবির জন্য প্রথম নারী পরিচালক হিসেবে ‘স্যাটার্ন অ্যাওয়ার্ড’ও অর্জন করেন। ২০১০ সালে বিশ্বের সেরা ১০০ ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তালিকায় তার নাম প্রকাশিত হয়।

জেন চ্যাম্পিয়ান

অস্কারে সেরা পরিচালকের মনোনয়নের তালিকায় প্রায় সর্বদাই স্থান দখল করে একটি নাম এলিজাবেথ জেন চ্যাম্পিয়ন। তিনি নিউজিল্যান্ডের একজন ছবি পরিচালক, কাহিনী নির্মাতা ও প্রযোজক। এ পর্যন্ত অস্কারে মাত্র চারজন নারী পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন এবং এ তালিকায় তিনি ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। ১৯৯৩ সালে তার পরিচালিত ‘দ্য পিয়ানো’ ছবির জন্য তিনি সেরা কাহিনী নির্মাতা হিসেবে অস্কার লাভ করেন।

গিনা প্রিন্স-বাইথউড

২০০০ সালে সারাবিশ্বে সমাদৃত আমেরিকান ছবি ‘লাভ অ্যান্ড বাস্কেটবল’র পরিচালক ও লেখক গিনা প্রিন্স-বাইথউড। ছবিটি পরিচালনার জন্য তিনি প্রথম সেরা ছবি হিসেবে ‘ইন্ডিপেনডেন্ট স্প্রিট অ্যাওয়ার্ড’ অর্জনসহ একটি মানবিক পুরস্কার লাভ করেন। এরপর ২০০৮ সালে তিনি ‘দ্য সিক্রেট লাইফ অব বিস’ ছবিটি পরিচালনা করেন। সম্প্রতি ৫৯ বছর বয়সী গিনা ‘ব্ল্যাকবার্ড’ নামক একটি নতুন ছবি পরিচালনা করছেন, যা চলতি বছর মুক্তি পাবে বলে জানা গেছে।

ক্লেইরি ডেনিস

ফ্রান্সের কিংবদন্তি পরিচালক ক্লেইরি ডেনিস সারা জীবন দর্শকদের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করেছেন। ১৯৯৮ সালে ‘চকলেট’ ছবিটি পরিচালনার মধ্য দিয়ে হলিউডে তার অভিষেক ঘটে, যা বক্স অফিসে তুমুল সাড়া ফেলে। ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক কাহিনী অবলম্বনে তার পরিচালিত ১৯৯৯ সালে ‘বিউ ট্রাভেল’, ২০০৮ সালে ‘৩৫ শটস অব রাম’ এবং ২০০৯ সালে ‘হোয়াইট ম্যাটেরিয়াল’ ছবিগুলো সমালোচকদের নজর কেড়ে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করে। ২০১৩ সালের স্টোকহোম ফিল্ম ফ্যাস্টিভালে ৬৫ বছর বয়সী এ তারকা আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।

ক্যাথরিন হার্ডউইক

২০০৮ সালে সর্বোচ্চ বিক্রিত উপন্যাস ‘টোয়াইলাইট’ অবলম্বনে নির্মিত হয় বিখ্যাত ছবি ‘টোয়াইলাইট’। ক্যাথরিন হার্ডউইক পরিচালিত এ ছবিটি মাত্র এক সপ্তাহে ৬৯.৬ কোটি ডলার আয় করে দর্শকদের মন জয় করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়। একজন নারী পরিচালক হিসেবে এ ধরনের সাফল্য লাভ করেহলিউডে তিনিই প্রথম রেকর্ড গড়েন।

মিরা নায়ের

ভারতীয় মিরা নায়ের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে একজন ফিল্ম আর্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘সালাম বম্বে’ ১৯৮৮ সালে সেরা বিদেশি ভাষার ছবি হিসেবে অস্কার মনোনয়ন লাভ করে। এ ছাড়াও তার পরিচালিত ডকুমেন্টারি ‘সো ফার ফ্রম ইন্ডিয়া’ এবং ‘ইন্ডিয়া কাবারেট’ অস্কার মনোনয়নসহ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করে। ২০১২ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করে।

অ্যামি হ্যাকারলিং

অ্যামি হ্যাকারলিং সেই সব নারী পরিচালকের একজন, যারা একের পর এক হিট ছবি দিয়ে বক্স অফিস মাতিয়ে তোলেন। তার পরিচালিত ‘ফার্স্ট টাইমস অ্যাট রিজমন্ট হাই’, ‘ইউরোপিয়ান ভেকেশন’ এবং ‘ক্লুলেস’ ৮০ ও ৯০ দশকে বক্স অফিসের সবচেয়ে হিট ছবিগুলোর তালিকার শীর্ষে ছিল। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৮ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে ‘ফ্রাঙ্কলিন জে. স্ক্যাফনার মেডেল’ এবং ১৯৯৯ সালে ‘ক্রিস্টাল অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন।

সোফিয়া কপোলা

‘গডফাদার’ পরিচালক হিসেবে খ্যাত ফ্রান্সিস ফ্রড কপোলার মেয়ে সোফিয়া কপোলাকে দেখলেই দর্শকদের মনে একটি প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে- পরিচালনার দক্ষতা কি জৈবিক জীনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়? বাবার যোগ্য মেয়ে সোফিয়া। ২০০৩ সালে তার পরিচালিত ‘লস্ট ইন ট্রান্সলেশন’ ছবিটি সেরা বাস্তবধর্মী কাহিনী হিসেবে অস্কার পুরস্কার অর্জন করে। এ ছাড়াও তিনি (প্রথম আমেরিকান নারী) সেরা পরিচালকের ক্যাটাগরিতে তৃতীয়তম নারী হিসেবে অস্কার মনোনয়ন লাভ করেন।

জুলি টেমর

‘দ্য লায়ন কিং’ ছবিটি পরিচালনার জন্য টনি অ্যাওয়ার্ড অর্জনের মধ্য দিয়ে হলিউডে প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন ৬১ বছর বয়সী আমেরিকান পরিচালক জুলি টেমর। এরপর ‘ফ্রিদা’ ও ‘দ্য টেম্পেস্ট’র জন্য বিভিন্ন পুরস্কার অর্জনসহ সমালোচকদের নজর কাড়েন। এ ছাড়া তিনি ওপেরা ছবি ও থিয়েটারও পরিচালনা করেন।

নোরা ইফ্রোন

নোরা ইফ্রোনের কথা না বললেই নয়। আমেরিকান রোমান্টিক কমেডি ছবির রানী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। দুঃখের বিষয়, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নোরা ইফ্রোন ২০১২ সালে ২৬ জুন ৭১ বছর বয়সে মারা যান। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর দ্রুত সরস জবাবের জন্য তিনি চিরকাল তার ভক্তদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। তিনি ‘সিল্কউড’, ‘হোয়েন হ্যারি মেট স্যালি’ এবং ‘স্লিপলেস ইন স্যাটল’ ছবির কাহিনী নির্মাতা হিসেবে তিনবার অস্কার মনোনয়ন লাভ করেন। ‘জুলি ও জুলিয়া’ ছিল তার পরিচালিত সর্বশেষ ছবি।

(দ্য রিপোর্ট/পিআর/এপি/এজেড/ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৪)