ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : চার্লস ডিকেন্সের পুরো নাম চার্লস জন হাফাম ডিকেন্স। বয ছিল তার ছদ্মনাম। তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ ঔপন্যাসিক। তাকে ভিক্টোরিয়ান যুগের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক মনে করা হয়। ডিকেন্স তার জীবদ্দশাতেই পূর্বসূরি লেখকদের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথে ১৮১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এ কালজয়ী ইংরেজ ঔপন্যাসিক।
তার বাবার নাম জন ডিকেন্স, আর মা এলিজাবেথ নিবারো। তিনি ছিলেন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। চার্লসের জন্মের অল্পকিছু দিন পরই ব্লুমসবারির নরফোক স্ট্রিটে চলে যায় পরিবারটি। এর কিছুদিন পর যায় কেন্টের চাতাম-এ। চাতামেই কাটে চার্লসের শৈশব। এখানকার উইলিয়াম গিলস স্কুলে তিনি লেখাপড়াও করেন। এরপর তারা চলে যান কেন্টের ক্যামডেনে।
তার বাবা ছিলেন নৌ-বিভাগের নিম্ন বেতনভুক্ত একজন কেরানি। সংসারে অভাব-অনটন তাই লেগেই থাকত। ফলে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় চার্লসকে; কাজ নেন হাঙ্গারফোর্ড স্টেয়ারে অবস্থিত ওয়ারেন ব্ল্যাকিং ওয়্যারহাউস নামের একটি জুতা পালিশের কারখানায়। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা কাজ করে জুতা পালিশের বোতলে লেবেল লাগানোর কাজ শুরু করেন তিনি। বিনিময়ে সপ্তাহের শেষে পেতেন ৬ সিলিং করে। কারখানার এই কঠোর পরিশ্রম আর অনাদর-নির্মম ব্যবহার গভীর প্রভাব ফেলে তার মনে, যার পরিচয় আমরা পাই পরবর্তী জীবনে তার লেখা উপন্যাসগুলোতে।
একটি মৃত্যুর ঘটনা এ সময় বদলে দেয় তার জীবন। তার বাবা জন ডিকেন্সের দাদি মারা যাওয়ার সময় দিয়ে যান ৪৫০ পাউন্ড। চার্লস আবার ভর্তি হলেন ওয়েলিংটন হাউস একাডেমি স্কুলে । কিন্তু স্কুলের নিয়মানুবর্তিতা, শিক্ষকদের নির্মম আচরণ আর কঠিন শাস্তির জন্যতিনি স্কুল ছেড়ে দিলেন। ১৮২৭ সালের মে মাসে হলবর্ন কোর্টে জুনিয়র কেরানি হিসেবে চাকরি নিলেও পরের বছরের নভেম্বরে ছেড়ে দেন; শুরু করেন সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা, নেন প্রশিক্ষণ। ১৮৩৪ সাল থেকে মর্নিং ক্রনিকল পত্রিকার মাধ্যমে শুরু করেন সাংবাদিকতার চাকরি, পরবর্তী সময়ে ‘হাউস হোল্ড ওয়ার্ড’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হন। ১৮৩৬ সালে চার্লস ক্যাথেরিন থমসন হগার্থকে বিয়ে করেন। তার সন্তানসংখ্যা ছিল ১০।
মায়ের কাছেই লেখাপড়ায় প্রথম হাতেখড়ি তার, এরপর মাত্র ৯ বছর বয়সের মধ্যেই পড়ে ফেলেন ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত সব লেখকদের বই আর এরাবিয়ান নাইটস, যেগুলো তার বাবার সংগ্রহে ছিল। এখান থেকেই তার সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের জন্ম।
১৮৩৩ সালে প্রথম গল্প লেখেন চার্লস ডিকেন্স- ‘আ ডিনার অ্যাট পপলার ওয়ার্ক’ শিরোনামে, যা ছাপা হয় লন্ডনের মান্থলি ম্যাগাজিনে। ১৮৩৬ সালের মার্চ থেকে শুরু করেন ধারাবাহিক উপন্যাস ‘দ্য পিকউইক পেপারস’ লেখা, যা তাকে এনে দেয় সাহিত্যিকের স্বীকৃতি। এরপর একের পর এক লেখেন তার বিখ্যাত সব বই।
তার অধিকাংশ রচনাই পত্রপত্রিকায় মাসিক কিস্তিতে প্রকাশিত হতো। এ পদ্ধতিতে রচনা প্রকাশকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনেও ডিকেন্সের কিছু অবদান আছে। অন্যান্য লেখক ধারাবাহিক কিস্তি প্রকাশের আগেই উপন্যাস শেষ করতেন; কিন্তু ডিকেন্স কিস্তি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরের অধ্যায়গুলো রচনা করে যেতেন। এ পদ্ধতিতে উপন্যাস রচনার ফলে তার উপন্যাসগুলোর গল্পে একটি বিশেষ ছন্দ দেখা যেত। অধ্যায়গুলোর শেষটুকু হতো রহস্যময়, যার ফলে পাঠক পরের কিস্তিটি পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন। তার গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাসগুলো এতই জনপ্রিয় যে, এগুলো কখনোই আউট অব প্রিন্ট হয়ে যায়নি।
তার অসাধারণ গদ্যশৈলীর কারণে ইংরেজি সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখকদের আসনে অন্যতম লেখক হিসেবে নিজের আসনটি তৈরি করে নিয়েছিলেন ডিকেন্স। অমর হয়ে আছেন তার কালজয়ী সব সৃষ্টির জন্য, যার বেশিরভাগই এখন ক্লাসিকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।
১৮৭০ সালের ৯ ই জুন মারা যান জনপ্রিয় এই ইংরেজ ঔপন্যাসিক। তাকে সমাধিস্থ করা হয় পোয়েটস কর্নার, ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে।
তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হলো- স্কেচেস বাই বজ, দ্য ওল্ড কিউরিওসিটি শপ, অলিভার টুইস্ট, নিকোলাস নিকোলবি, বার্নাবি রাজ, আ ক্রিসমাস ক্যারোল, মার্টিন চাজলউইট, আ টেল অব টু সিটিজ, ডেভিড কপারফিল্ড, দ্য গ্রেট এক্সপেকটেশন, ব্ল্যাক হাউস, লিটল ডরিট, হার্ড টাইমস, আওয়ার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড, দ্য পিকউইক পেপারস ইত্যাদি।
(দ্য রিপোর্ট/এমএইচও/এমডি/এজেড/ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৪)