দুই গোত্রের বিবাদের ফায়সালা
রাসূলের (সা.) খুতবা
একেএম মহিউদ্দীন
বনি মুরাদের প্রতিনিধি দল রাসূলের (সা.) দরবারে পৌঁছলে তাদের ভাষক জুবইয়ান ইবন কাদাওয়া দাঁড়িয়ে একটি বক্তৃতা দেয়। তাতে সে আরবের অতি প্রাচীন ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে আদ ও সামুদের কথা উল্লেখ করে। সে বলে, তায়েফ ও তার আশপাশের সবুজ শ্যামল ভূখণ্ডটি কোনো এক যুগে আমাদেরই ছিল। বনি সাকিফ তা আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ফলে আমরা বছরের পর বছর ধরে উপকূলীয় এলাকাসমূহে নির্বাসিত জীবনযাপন করছি। শেষ পর্যন্ত সে বলে, হে আল্লাহর রাসূল, ইসলাম যখন জালিমের কাছ থেকে মজলুমের হক উদ্ধার করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তখন আপনি বনি সাকিফের কাছ থেকে আমাদের পৈতৃক ভূখণ্ডটি উদ্ধার করে আমাদের হাতে তুলে দিন।
ঘটনাচক্রে সেখানে আখনাছ ইবন শুরায়ক এবং আসওয়াদ ইবন মাসউদ সাকাফি নামে বনি সাকিফের দুজন সর্দার উপস্থিত ছিল। আসওয়াদ সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে একটি সারগর্ভ বক্তৃতা প্রদান করে। সে মূল ঘটনাপঞ্জির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে বলে, তায়েফ এবং বতনে দুজ আমাদেরই পিতৃভূমি, যা আমাদের পূর্ব পুরুষরা অনেক প্রাচীন যুগে অস্ত্রবলে জয় করেছিল।তাদের এই নিরর্থক বিতর্ক শুনে রাসূল (সা.) একটি ভাষণ দেন। এই ভাষণ খুতবাতে মাওলানা ইদরীস তুরভীতে উদ্ধৃত হয়েছে। রাসূল (সা.) তাঁর ভাষণে বলেন, পার্থিব নিয়ামতসমূহ আল্লাহ তায়ালার কাছে চকমকে বালি রাশির চেয়েও ক্ষুদ্র এবং হেয়। যদি আল্লাহ তায়ালার কাছে এর মর্যাদা মাছির ডানার সমতুল্যও হতো, তাহলে না কোনো মুসলমান অভাবী থাকত, আর না কোনো কাফির এখানে আয়েশ করতে পারত। মানুষ যদি তার নির্ধারিত মৃত্যুক্ষণ জানতে পারত, তাহলে তার জীবন দুর্বীষহ হয়ে উঠত এবং কোনোরূপ আয়েশ-আরামই তার ভালো লাগত না। কিন্তু মানুষের কাছে তার মৃত্যুক্ষণ গোপন রাখা হয়েছে এবং তার কামনা-বাসনাকে করা হয়েছে দীর্ঘায়িত। জাহিলিয়া যুগকে জাহিলিয়া যুগ বলা হয় এ জন্য যে, ওই যুগের মানুষের আমল (কার্যকলাপ) ছিল ভিত্তিহীন এবং ধর্ম ছিল খাপছাড়া। যে ব্যক্তি ইসলামী যুগ পেয়েছে, তার হাতে চাই পতিত জমি আর চাই আবাদ জমি, শরিয়ত নির্ধারিত অংশ পরিশোধ করার পর তা তারই মালিকানাভুক্ত মনে করা হবে। সে অংশ উশর হোক কিংবা খেরাজ (ভূমিকর), তা প্রত্যেক মুসলমান এবং প্রত্যেক মুজাহিদ জিম্মির উপর নির্ধারণ করা হয়েছে। জাহিলিয়া যুগের লোকেরা গায়রুল্লাহর পূজা করত বলে এর শাস্তি ভোগ করতে থাকবে এবং এই শাস্তি কিয়ামত পর্যন্ত প্রলম্বিত হবে। আল্লাহ তায়ালা প্রবল পরাক্রমশালী হওয়া সত্ত্বেও তাদের (জাহিলিয়া যুগের লোকদেরকে) সুযোগ প্রদান করেন এবং সে সুযোগে তাদের শক্তিশালীরা দুর্বলের উপর চড়ে বসে এবং বড়রা ছোটদের হজম করে ফেলে। আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত মহান এবং অত্যন্ত পরাক্রমশালী। জাহিলিয়া যুগের সমগ্র রক্তপাত এবং অবৈধ কাজ-কারবার ধূলিস্মাৎ হয়ে গেছে। যা গত হয়েছে তা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিয়েছেন। তবে যারা আগামীতে এরূপ করবে আল্লাহ তায়ালা তাদের শাস্তি দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত পরাক্রমশালী। তার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।
প্রিয় পাঠক, রাসূলে খোদার এ ভাষণটি সংক্ষিপ্ত মনে হলেও এতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উদ্ধৃত হয়েছে। এখানে মৃত্যুর ক্ষণ না জানার হেতু, মানুষের চাওয়া-পাওয়া প্রসঙ্গ, জমির মালিকানাসত্ত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পূজার প্রসঙ্গ ছাড়াও উঠে এসেছে দুর্বলের সাথে জাহিলিয়া যুগের মানুষরা কেমন আচরণ করত। মূলত ভাষণটিতে জাহিলিয় বৈশিষ্ট্যবলী উদ্ধৃত করে মানুষকে এ সব বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।