দেশে দেশে বিয়ের ভিন্ন রূপ
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বিয়ে। যেকোনো মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিয়েকে বলা হয় নতুন জীবনের সূচনা। নতুন জীবনের সূচনার শুভক্ষণে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে পালন করা হয় ভিন্নধর্মী বিভিন্ন প্রথা। বিভিন্ন সংস্কৃতির কয়েকটি ভিন্নধর্মী বিয়ের প্রথা তুলে ধরা হলো দ্য রিপোর্টের পাঠকদের জন্য।
কাঁচ ভেঙেই শুভ কামনা
আমাদের সংস্কৃতিতে কোনো কিছু ভেঙে যাওয়াকে কুলক্ষণ হিসেবে দেখা হলেও ইহুদি ধর্মে কাঁচ ভাঙাকে ধরা হয় শুভ কামনা হিসেবে। আর তাই বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর এই ধর্মের ছেলেরা পা দিয়ে কাঁচ ভেঙে শুরু করে নতুন জীবন। তবে কেন ইহুদিদের বিয়েতে এই প্রথা যুক্ত হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। বিয়েতে আগত অতিথিরা এই কাঁচ ভাঙাকে বলেন ‘ম্যাজেল টোভ’, যার অর্থ শুভ কামনা।
পায়ের আঙ্গুলেই বিয়ের আংটি
বর-কনের হাতের আঙ্গুলে আংটি পরানো অধিকাংশ সংস্কৃতির বিয়েতেই প্রচলিত। তবে কোনো কোনো হিন্দু কনে বিয়ের আংটি হাতের আঙ্গুলের বদলে পায়ের আঙ্গুলে পরেন। সাধারণ রুপার আংটি বাম পায়ের মধ্যমাতে পরা হয়। বর বিয়ের অনুষ্ঠানে কনের পায়ে আংটি পরিয়ে দেন। ওই সংস্কৃতিতে বিবাহিত নারীর প্রতীক পায়ের আঙ্গুলের আংটি। কারণ শুধু বিবাহিত নারীরাই পায়ের আঙ্গুলে আংটি পরেন।
নবদম্পতির বিপদ টয়লেটে
মালেশিয়ার সানদাকান এলাকায় তিদং সম্প্রদায়ের বিয়ের প্রথা একইসঙ্গে কষ্টকর ও বিব্রতকর। কারণ তিদং সম্প্রদায়ে নববিবাহিত দম্পতিকে বিয়ের পর তিনদিন ও তিনরাত টয়লেটে যেতে দেওয়া হয় না। তিদং সম্প্রদায়ের মানুষ বিশ্বাস করে, যদি কোনো কারণে নবদম্পতি তিন দিন ও তিন রাতের আগে টয়লেটে যেতে বাধ্য হয়, তাহলে তাদের ভাগ্যে নেমে আসবে দুর্ভাগ্য। এই দুর্ভাগ্যের কারণে তাদের মৃত সন্তান হতে পারে, এমনকি কখনও সন্তান নাও হতে পারে। ওই কয়দিন নবদম্পতিকে না খাইয়ে রাখা হয়। পান করার জন্য দেওয়া হয় সামান্য পানি।
বিয়ের আগে আরেক বিয়ে
ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে প্রচলিত আছে এই প্রথা। ওইসব অঞ্চলে মেয়ে শিশুর ওপরের দাঁত আগে পড়লে কুলক্ষণ হিসেবে মনে করা হয়। ধারণা করা হয় ভূত ওই মেয়েটিকে ঘৃণা করে। তাই মেয়েটিকে অদূর ভবিষ্যতে বাঘ বা এই জাতীয় কিছু খেয়ে ফেলবে। এ জন্য এই প্রথানুযায়ী মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়া হয় কোনো প্রাণীর সঙ্গে। খারাপ আত্মা তাড়ানোর জন্যই এই বিয়ে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে মেয়েটির সত্যিকারের বিয়েতে বাধা দূর করাও প্রাণীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া আরেকটা উদ্দেশ্য।
ঝাড়ু দিয়ে অতীতকে বিদায়
এই প্রথানুযায়ী নবদম্পতিকে বিয়ের সময় একসঙ্গে লাফ দিয়ে একটি ঝাড়ু পার হতে হয়। অতীতকে পেছনে ফেলে নতুন সূচনাকে প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্যই এই প্রথার প্রচলন হয়েছে।
কনে অপহরণ
অতীতে এ ধরনের প্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথানুযায়ী কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীকে বিয়ে করতে চাইলে তাকে অহপরণ করে নিয়ে যেত। যদি মেয়েটিকে অপহরণের পর সফলভাবে দুই-তিনদিন তার কাছে রাখতে সক্ষম হতো, তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবেই তাদের স্বামী-স্ত্রী ঘোষণা করা হতো। জিপসিদের মধ্যে এ ধরনের বিয়ের প্রথা আজও প্রচলিত আছে।
ময়লা দিয়েই অকল্যাণ দূর
এই প্রথানুযায়ী বিয়ের আগে কনের গায়ে ঢেলে দেওয়া হতো পঁচা ডিম, ভুষকালি ও আটাসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা। খারাপ আত্মা তাড়ানোর জন্যই করা হতো এমনটা। এখনো স্কটল্যান্ডের কয়েকটি এলাকায় প্রচলিত আছে এই প্রথা।
প্রহারেই শক্তিশালী বর
বিয়ে শেষে অধিকাংশ পুরুষ যখন স্বপ্ন দেখেন নতুন ভবিষ্যতের, তখন দক্ষিণ কোরিয়ার বরদের খেতে হয় বন্ধুদের কাছে পিটুনি। দক্ষিণ কোরিয়ায় বিয়ে শেষে বরের মোজা খুলে তার পায়ে বিশেষ এক ধরনের শুটকি মাছ দিয়ে পেটাতে থাকে তার বন্ধুরা। বিয়ের প্রথম রাতে বরকে শক্তিশালী করার অভিপ্রায়েই এমন করা হয়!
(দ্য রিপোর্ট/ কেএন/ এমডি/ ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৪)