রাবি সংবাদদাতা : ভয়াবহ সেশনজটের কবলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী। সর্বশেষ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলাকে কেন্দ্র করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা হরতাল-অবরোধে গত নভেম্বর মাস থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ৫২ কার্যদিবসের মধ্যে ৩৬ দিনই কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স বাতিলের দাবিতে ২ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টা দিকে শিক্ষার্থীরা প্রসাশন ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে থাকে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, ককটেল এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে গুরুতর আহত ৫০ জনসহ প্রায় ২০০ জনের অধিক শিক্ষার্থী আহত হন। অবস্থা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর আগে গত নভেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৭ কার্যদিবসে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল, অবরোধে ৩৪ দিনই কোনো ক্লাস হয়নি।

বাকি দিনগুলো ক্যাম্পাস খোলা থাকায় সেদিন শুধু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস হয়নি। এদিকে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই দেশে সহিংসতা কয়েকগুণে বেড়ে যায়।

হরতাল-অবরোধকারীদের অব্যাহত সহিংসতা ও নাশকতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যত অঘোষিত ছুটি চলছিল। কাদের মোল্লার ফাঁসির পর থেকে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে হল ছাড়তে শুরু করেন। রায় কার্যক্রর করার পরদিনই শতশত শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করেন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শীতকালীন ছুটি দেওয়া হয়। ২৩ থেকে ২৭ জানুয়ারি প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাঝে ১৬ জানুয়ারি থেকে বর্ধিত ফি বাতিল ও সান্ধ্য কোর্স বন্ধের আন্দোলনের মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান নেয়। ওই বিভাগগুলো পরীক্ষা শুরু করলেও দুই একটি পরীক্ষা নেওয়ার পর আর পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিভিন্ন অনুষদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত শুধু ইতিহাস বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা হলেও ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, আরবি সাহিত্য, ইসলামিক স্টাডিজ, ভাষা, চারুকল, নাট্যকলা বিভাগের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। এ বিভাগগুলোর মধ্যে ভাষা, আরবি সাহিত্য, নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সেশনজট আরও ভয়াবহ।

সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান, নৃ-বিজ্ঞান, লোক প্রশাসন বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা হলেও দুই একটি পরীক্ষা হয়ে থেমে আছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ফোকলোর, ইনফর্মেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সব বর্ষের পরীক্ষা।

জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত পরীক্ষা চালাকালে বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। এ অনুষদে ভয়াবহ সেশনজট দেখা যায় মনোবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ানিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে।

চারুকলা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রায়হান বলেন, ‘আমারা ০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থী হয়ে এখনও ৩য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারিনি এবং ৩য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার কোনো সম্ভাব্য তারিখও জানানো হয়নি বিভাগ থেকে। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে আমরা আরও সেশনজটে পড়ব।’তাই দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে শিক্ষার সুষ্ঠু পবিবেশ ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর সারওয়ার জাহান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিভাগে ভয়াবহ সেশনজট রয়েছে। এর মধ্যেও আবার বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা ভেবে দেখেছি। তবে আলোচনার মাধ্যমে আমরা দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্ট করছি।’ এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

(এমএএ/এনডিএস/এনআই/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৪)