জাবিতে পাখিমেলা অনুষ্ঠিত
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন করি সবাই যত্ন’ স্লোগানকে সামনে রেখে শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘পাখি মেলা-২০১৪’।
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। জহির রায়হান মিলনায়তন চত্বরে সাড়ে ৯টায় প্রধান অতিথি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মতিন বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী পাখিমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অপরূপ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি ইনাম আল হক, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ।
উদ্বোধনী ভাষণে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বলেন, ‘অব্যাহতভাবে বন উজার ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্টের ফলে পরিবেশ ও প্রকৃতি আজ হুমকির সম্মুখীন। পাখির ১১ শতাংশ প্রজাতি আজ বিলুপ্তির পথে।’
এ সময় তিনি পরিবেশ ও প্রকৃতিকে বাঁচাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘পাখিমেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা পৌঁছানো যায়। পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে সমাজ রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রকৃতির কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। বন্যপ্রাণী, পাখি আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতিকে রক্ষা করছে। এ জন্য পরিবেশকে বাঁচাতে পশু-পাখিকে ভালোবাসতে হবে।’
সভাপতির ভাষণে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘সরকার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ তৈরি করেছে। এ আইনের সুফল হিসেবে দেশব্যাপী প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার, গণমাধ্যম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ ভূমিকায় মানুষের মধ্যে প্রকৃতি এবং পাখির প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে, সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
প্রধান বন সংরক্ষক তার ভাষণে পাখিমেলা আয়োজনের জন্য প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগকে সাধুবাদ জানান এবং এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
পাখিমেলা আয়োজক কমিটি ২০১৪’র আহ্বায়ক ও প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা ফিরোজ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পশু-পাখি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও পাখি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতেই এই মেলার আয়োজন।’ আগামীতে আরও বৃহৎ পরিসরে এ মেলার আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে এবারই প্রথম ‘বিগ বার্ড অব দ্যা ইয়ার ২০১৪’ সম্মাননা প্রদান করা হয়। বছরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দুষ্প্রাপ্য ও বিলুপ্তপ্রায় পাখি দেখার জন্য বন বিভাগের কর্মকর্তা মনির খান ও তার স্ত্রী তানিয়া খান প্রথম, রেজাউল হাফিজ দ্বিতীয় এবং কিরণ খান তৃতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
সাভার থেকে বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় আসা সাবরিনা তুলি বলেন, ‘মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। এটা অন্য রকম একটা আয়োজন। প্রতি বছর আমরা এই মেলা দেখতে চাই।’
দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের অংশগ্রহণে মেলা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিক্ষার্থীরাও মেলায় অংশ নেয়। মেলায় মোট আটটি স্টলে পাখি প্রদর্শিত হয়।
পাখিমেলায় ছোটদের পাখি বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কুইজ, বই-পোস্টার প্রদর্শনী, সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পাখি দেখা, পাখি চেনার প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক বিতর্ক ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০-২২টি লেকসহ পুরো ক্যাম্পাসে প্রায় ১৮৯ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে পায় ৬০ প্রজাতির অতিথি পাখি এবং ৯০ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশের পাখি রয়েছে। পাখিমেলার মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ২০০১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
(দ্য রিপোর্ট/এএস/এসকে/আরকে/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৪)