হাসিব বিন শহিদ, দ্য রিপোর্ট : ঝালকাঠি-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়েছে। হলফনামায় তথ্য গোপনসহ দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি এমপি হারুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দুদকে আসে। কমিশনের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান অভিযোগটি পরীক্ষার জন্য বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্তের মহাপরিচালক ব্রি. জে. (অব.) এম এইচ সালাহউদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছেন। দুদক সূত্র দ্য রিপোর্টকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন ২০১৩ সালে নির্বাচনীয় হলফনামায় যে সম্পদ দেখিয়েছেন তা জালিয়াতির অংশবিশেষ। হলফনামার বাইরেও তার প্রচুর সম্পদ রয়েছে। যেমন- তার দুটি জাহাজ এমভি ন্যাভ স্টার-১ ও এমভি ন্যাভ স্টার-৩ রয়েছে। যার ক্রয় মূল্য ছয় কোটি ৫০ লাখ টাকা করে মোট ১৩ কোটি টাকা।

চারটি বাড়ির মধ্যে রাজধানীর বারিধারার ব্লক-এইচ ও জে ব্লকের দুটি বাড়ির একটি চার দশমিক পাঁচ কাঠা ও অন্যটি ছয় দশমিক পাঁচ কাঠা (বাড়ি নং-৬, রোড নং-২) জমির উপর ১০তলা করে বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। যার মূল্য ২৮ কোটি টাকা। বনানীতে বাড়ি নং-৫০, রোড নং-২৭, ব্লক-কে কর্ণার প্লটটিতে ১০তলা বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। যার মূল্য ১৪ কোটি টাকা। মিরপুর-১০ এ আছে ছয়তলা একটি বিল্ডিং যার মূল্য আট কোটি টাকা। এমপির নিজ ব্যবহারের জন্য টয়োটা প্রাডো দুটি এবং প্রিমিও ও নিশান কার তিনটি যার মূল্য দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ২০১৩ সালের নির্বাচনীয় হলফনামায় শেয়ার ক্রয়ের জন্য ১৩ কোটি টাকা দেখানো হলেও তিনি ৩০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন। মালয়েশিয়ায় তার দুইটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যার মূল্য তিন কোটি টাকা।

২০০৯ সালে জালিয়াতির ১৩ কোটি টাকা দিয়ে এ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইন্স লিমিটেড, ক্যাস্টল লুব্রিকেন্টস লিমিটেড, আল হুমাইয়রা লিমিটেড, রাজবিথি ট্রাভেলস লিমিটেড, মেসার্স কিসমা টেড্রিং লিমিটেডের নামে থাকা লোন পরিশোধ করেন তিনি।

২০০৯ সালে বনানী শাখায় ১৫ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করা হয় ফয়জুর রব আজাদের নামে। তার ব্যবসায়িক বন্ধু ও পার্টনার আলমগীর সিকদারের ওসিন লাইন লিমিটেড প্রাইম ব্যাংকের এ্যালিফেন্ট রোড শাখার হিসাবে টাকা ট্রান্সফার বা জমা দেখানো হয়েছে। গোলাম মোস্তফা রাজা ও ফরিদ উদ্দিনের প্রিমিয়ার ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখলে জালিয়াতির টাকার অনুসন্ধান পাওয়া যাবে। তাদের হিসাবে প্রায় আট কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া দুই ভাই মুজিবুল হক কামাল ও ফয়জুর রব আজাদের প্রিমিয়ার ব্যাংকের মেসার্স কামাল বিল্ডার্সের নামে ও আজাদের নিজ নামের অ্যাকাউন্ট তদন্ত করলে জালিয়াতির আট কোটি টাকার হিসাব পাওয়া যাবে। জালিয়াতির টাকা থেকে এমপির ব্যবসায়ী পার্টনার কাজী নাসির উদ্দিন বাবুলকে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এমপি হারুনের ছেলে আদনান, নাহিয়ান ও তার স্ত্রীর প্রিমিয়ার ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট তদন্ত করলে জালিয়াতির গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া যাবে। ওই টাকা দিয়ে ২০০৯ সালে তার ছেলে নাহিয়ান হারুন প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত হয়েছেন। ঢাকার বাসা এবং ঢাকার দুইটি অফিস, দেশের বাড়ি রি-মডেলিং করা হয়েছে। এতে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ করেছেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই কোটি টাকা খরচ করেছেন জালিয়াতির টাকা থেকে।

২০০৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় তার ৩২ লাখ টাকার সম্পদ এবং ২০১৩ সালের নির্বাচনী হলফনামায় ৫৪ কোটি টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া ১৫০ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি মর্মে অভিযোগ রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/জেএম/আরকে/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৪)