মনোয়ার জাহান চৌধুরী, সিলেট : সিলেটে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্ব ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সদর উপজেলা কমিটি বাতিল এবং নতুন কমিটি গঠন নিয়ে দুপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম. ইলিয়াস আলীর অনুসারী সদর উপজেলা বিএনপির নেতারা কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে সিলেটের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। একই সঙ্গে এ দাবির পক্ষে ও বিপক্ষে সিলেট বিএনপিতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

যদি নতুন কমিটি বাতিল করা না হয় তা হলে এ দ্বন্দ্ব আরও চরম আকার ধারণ করবে বলেও ইলিয়াস অনুসারী নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

নগরীতে শুক্রবার বিকেল ৩টায় সমাবেশ করেন বিলুপ্ত সদর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশ করে নতুন কমিটিবিরোধী একটি মিছিলও বের করেন তারা।

মিছিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হয়। এমনকি তাকে সিলেটের দায়িত্ব থেকে অপসারণেরও দাবি করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে বক্তারা সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির বৈধ কমিটি না ভাঙ্গার জন্য কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানান। ‘নতুন কমিটি দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ‘ত্যাগী ও মামলা হামলায় জর্জরিত নেতাদের বাদ দিয়ে বসন্তের কোকিল ও সদর উপজেলার বাসিন্দা নয় এমন সুবিধাবাদীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে নতুন কমিটিতে।’ এমন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তারা।

তারা উপজেলা নির্বাচনে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জসহ সকল উপজেলায় তৃণমূলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের প্রার্থী করার দাবি জানান।

সমাবেশের এক পর্যায়ে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সভাস্থলে এসে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেন। তিনি বিষয়টি কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে ‘সুরাহা’ করে দেবেন বলেও আশ্বাস দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির ১৩৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে কমিটির অনুমোদন দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মো. রুহুল কবির রিজভী।

কমিটির আহ্বায়ক হলেন- আবদুর রউফ, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক আহমদ, আবুল কাশেম, তারেক কালাম, আজির উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন, জমির উদ্দিন, আহমেদুর রহমান চৌধুরী মিলু, মো. দেলওয়ার, গোলাম কিবরিয়া, ছমরু মিয়া, আফরোজ মিয়া, ইলিয়াছ, আহমদ আলী, ওয়ারিছ আলী ও বাদশা মিয়া।

নতুন কমিটিতে ১২০ জনকে সদস্য করা হয়েছে।

সিলেট বিএনপির ইলিয়াস অনুসারীদের অভিযোগ, জেলা বিএনপিকে না জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে সদর উপজেলা বিএনপির এ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটি গঠনের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দফতর সম্পাদক জেলার নেতাদের নিয়ে কমিটি হয়েছে বলে জানান। পরে জেলার নেতারা কেন্দ্রীয় মহাসচিবকে জানান, উপজেলা নির্বাচনের আগে কমিটি ভেঙ্গে দিলে দলে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। মহাসচিব বিষয়টি ‘দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন’ বলে জেলার সিনিয়ার নেতারা জানান।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নিখোঁজ এম. ইলিয়াস আলী ২০০৯ সালে সদর উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটিতে বিএনপি নেতা শাহ জামাল নুরুল হুদাকে সভাপতি ও তারেক কামালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

ওই কমিটি হঠাৎ বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুল গফফার দ্য রিপোর্টকে জানান, সদর উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের বিষয়ে জেলা বিএনপির কারও সঙ্গে কোনো আলাপ করা হয়নি।

নতুন আহ্বায়ক কমিটির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ আহ্বায়ক কমিটির কারণে আগামী উপজেলা নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। দলেও ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ইলিয়াস অনুসারীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক সভা করে ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তারা।

(দ্য রিপোর্ট/এমজেসি/এমএআর/এনআই/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৪)