এইচ এম প্রফুল্ল, খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। এখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবনধারা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য। এখানকার পাহাড়-পর্বত, নদী-প্রকৃতি ও নৃ-জাতিগোষ্ঠীর জীবন সংস্কৃতি আকৃষ্ট করবে যেকোনো পর্যটককেই।

সাম্প্রতিক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নয়নাভিরাম খাগড়াছড়ি এখন প্রায় পর্যটনশূন্য! হোটেল-মোটেলে তেমন বুকিং না থাকায় এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ভুগছেন হতাশায়। হোটেল-মোটেল মালিকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। শুধু পর্যটক মোটেল গত তিন মাসে লোকমান গুনেছে ১২ লাখ টাকা। একই অবস্থা বেসরকারি হোটেল মালিকদের।

খাগড়াছড়ি জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতির নজরকাড়া হাজারও দৃশ্য। এখানে শুভ্র মেঘের চাদরের নিচে রয়েছে সবুজ বনারাজিতে ঘেরা ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়। তার মাঝ দিয়ে গেছে আঁকাবাঁকা সড়ক। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে নাম না জানা নদ-নদী ও ঝরনাধারা।

খাগড়াছড়ির সর্বোচ্চ চূড়া আলুটিলা। যার উচ্চতা সমতল থেকে প্রায় ২৬শ’ ফুট উপরে। এই পর্যটন কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ৬ কিলোমিটার দূরের খাগড়াছড়ি শহরের দৃশ্য সত্যিই উপভোগ করার মতো।

এ ছাড়া আলুটিলায় রয়েছে রহস্যময় এক সুড়ঙ্গ। প্রায় সাড়ে তিন শ’ ফুট নিচে পাহাড়ের তলদেশে এ সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ ফুট। প্রতিদিন পর্যটকরা এই সুড়ঙ্গ দেখতে আসেন।

অন্ধকার এই সুড়ঙ্গে মশাল জ্বালিয়ে প্রবেশ করতে হয়। দিয়াশলাই সঙ্গে নিতে ভুলবেন না কিন্তু। মাইচছড়িতে রয়েছে প্রায় তিন হাজার ফুট পাহাড়ের চূড়ায় ‘দেবতা পুকুর’, খাগড়াছড়ির হৃদয় মেম্বার পাড়ায় রয়েছে প্রাকৃতিক ঝরনা ‘রিছাই ঝরনা’, জেলা পরিষদ পার্কের ঝুলন্ত সেতু।

জেলার সীমান্ত শহর রামগড়ে বিজিবির ‘জন্মস্থান’, কৃত্রিম লেক ও দীঘিনালায় সদ্য আবিষ্কৃত তৈদুছড়ায় দেশের বৃহৎ ঝরনা। জলপ্রপাত ঘুরে বেড়ানোর অসংখ্য পর্যটন স্পট। এ সব পর্যটন স্পটগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুহূর্তেই আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক ভুবনে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে খাগড়াছড়িতে আসা পর্যটকদের থাকার-খাওয়ার রয়েছে পর্যটন মোটেল, গাইরিং, শৈল সুবর্না ও ইবোইনছড়ি ছাড়াও মানসম্মত হোটেল- রেস্টুরেন্ট।

প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলো থাকতো পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু চলতি মৌসুমে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, গেল বছর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা তার লোকসান হয়েছে।

তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে আবার পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।

খাগড়াছড়ি বেসরকারি হোটেল গাইরিং-এর মালিক এস অনন্ত ত্রিপুরা জানান, গত তিন মাসে তার হোটেলে কোনো পর্যটক আসেনি। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ প্রায় ৮ লাখ লোকসান দিতে হয়েছে। একই তথ্য দিয়েছেন শৈল সুবর্না ও ইবোইনছড়ি কর্তৃপক্ষ।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার শেখ মো. মিজানুর রহমান জানান, বর্তমানে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। পর্যটকদের অবাধে চলাফেরায় যেন সমস্যা না হয়, তাও দেখা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এইচএমপি/এসবি/এএইচ/আরকে/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৪)