লালবাগ কেল্লায় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজধানীর ঐতিহাসিক নিদর্শন লালবাগ কেল্লায় শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লায় আগত পরিদর্শক ও পর্যটকদের জন্য ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’ (আলোক ও শব্দের প্রদর্শনী) নতুন আকর্ষণ হবে।
জানা গেছে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানীতে সপ্তদশ শতকে নির্মিত অসমাপ্ত মোগল স্থাপত্য লালবাগ কেল্লা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। আলো-আঁধারির পরিবেশে দর্শক খুবই মনোযোগের সঙ্গে শতাব্দীর ইতিহাসের ধারাবাহিকতা জানতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে একটি সম্ভাবনাময় দেশ। আকারে ছোট হলেও প্রাচীনকাল থেকে আমাদের সম্পদ ও জনগণ বিদেশিদের আকর্ষণ করেছে। কালের বিবর্তনে দীর্ঘ উপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর এই দেশ থেকে বিদেশিরা চলে গেছে। কিন্তু তাদের স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের মূল্যবান সম্পদ হয়ে আছে।
শেখ হাসিনা জানান, তার সরকার দেশের ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিকাশকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান উন্নয়নের পাশাপাশি সারাদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যাতে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে পারে- এ জন্য তার সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। ১৯৯৬-২০০১ সালে তার সরকারের সময়ে দেশের জনগণের সামনে লালবাগ কেল্লার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শন তুলে ধরতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত দেশের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ইতিহাসবিদ ও স্থপতিগণসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান।
পরে প্রধানমন্ত্রী দর্শকদের সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন আলোক ও শব্দের প্রদর্শনী উপভোগ করেন- যাতে ভবনের মূল ফটকে বিশেষ লাইটিং ইফেক্টের মাধ্যমে রেকর্ডকৃত কথা ও গানসহ এই দুর্গের ইতিহাস তুলে ধরা হয়।
এদিকে পিআইডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর জানান, রবিবার ছাড়া প্রতিদিন মাগরিব ও এশার নামাজের মাঝামাঝি সময়ে একটি এবং এশার নামাজের পর আরেকটি মোট ৩০ মিনিট করে দু’টি শো দেখানো হবে। প্রবেশ মূল্য দশ টাকা ছাড়া বাংলাদেশিদের জন্য শো’র টিকেট মূল্য ২০ টাকা। সার্ক দেশের পর্যটকদের জন্য টিকিট মূল্য ১০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের নাগকিরদের জন্য ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান নূর জানান, ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’র প্রস্তুতি ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং এ থেকে মাসে ৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশিষ্ট লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক এই প্রদর্শনীর স্ক্রিপ্ট তৈরি করেন এবং এতে কণ্ঠ দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শিমুল ইউসুফ ও আসাদুজ্জামান নূর। এর মাধ্যমে পরিদর্শকরা লালবাগ দুর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সংস্কৃতিমন্ত্রী জানান, পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, কান্তজীর মন্দির ও মহাস্থানগড়সহ বাংলাদেশের ৪৪৮টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে একই রকম শো চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৬৭৮ সালে মোঘল সুবেদার ও সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা মোহাম্মদ আজম শাহ লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরে তিনি নিজেও সম্রাট হন। অবশ্য তার উত্তরসূরী শায়েস্তা খান এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেননি।
লালবাগ কেল্লার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজার পরিদর্শক এই দুর্গ পরিদর্শন করেন এবং সপ্তাহান্তে টিকেট বিক্রি বেড়ে যায়।
তারা আরও জানান, এই নতুন প্রকল্প উদ্বোধনের ফলে টিকেট বিক্রি আরও বেড়ে যাবে।
(দ্য রিপোর্ট/এমকে/ডব্লিউএন/এএল/ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৪)