রাবি সংবাদদাতা : আজ ৮ ফেব্রুয়ারি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের মেধাবী ছাত্র ফারুক হোসেনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।

২০১০ সালের এই রাতে শিবির নেতাকর্মীরা ফারুককে নির্মমভাবে হত্যা করে তার মৃতদেহ সৈয়দ আমীর আলি হলসংলগ্ন ম্যানহোলে ফেলে রাখে। এ সময় ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীর হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির ক্যাডাররা।

এ দিন ক্যাম্পাসে কোনো উত্তেজনা না থাকলেও গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

ওই রাতে শিবিরের হাতে নিহত হন রাবির ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হোসেন। এই চার বছরেও শেষ হয়নি নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম। বর্তমানে মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইবুনালে রয়েছে।

ফারুক হোসেনের বিচার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার বাবা-মা ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা। তাদের একটাই দাবি ফারুক হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছেলেকে হারিয়ে ফারুকের বাবা-মা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। মা হাসনা বানু এখনও পাগল প্রায়। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে দিনরাত শুধুই কান্নাকাটি করেন। অসুস্থ বাবা ফজলুর রহমানও ছেলের শোকে মাঝে মধ্যেই স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, ছেলেকে নিয়ে বড় স্বপ্ন ছিল। কিন্তু রাজনীতির কালো থাবায় মেধাবী ছেলেকে হারিয়ে সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে।

ফারুক হত্যার ঘটনায় রাবি ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু ছাত্রশিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আড়াই বছর পর ২০১২ সালের ২৮ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান আদালতে ১২৬৯ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, রাজশাহী মহানগর আমির আতাউর রহমান, রাবি ছাত্রশিবিরের তৎকালিন সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ, সেক্রেটারি মোবারক হোসেন, নবাব আব্দুল লতিফ হলের সভাপতি হাসমত আলী, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সভাপতি রাইজুল ইসলাম, শিবিরকর্মী রুহুল আমিন ও বাপ্পীসহ ১১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু আজও ফারুকের হত্যার যথাযথ বিচার হয়নি।

এদিকে ফারুক হত্যার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রফেসর গোলাম কবিরকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু আজও দোষীদের বিরুদ্ধে একাডেমিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা বলেন, ফারুক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শিবির নেতাকর্মীরা এখনও প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। কিছু দিন আগে এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান আসামি শামসুল আলম গোলাপকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এতে মামলার বিচার নিয়ে আমাদের মাঝে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। অবিলম্বে শহীদ ফারুক হত্যকাণ্ডের দ্রুতবিচার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এসবি/শাহ/ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৪)