দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ১৯৪৮ সালের ২৬ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছাত্র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা বিষয়ে বৈঠক করেন এবং বৈঠকে তিনি উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে তার অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন। সেই সঙ্গে ১৫ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে খাজা নাজিমুদ্দিনের বাংলাকে পূর্ব-পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির অঙ্গীকারনামা বাতিল ঘোষণা করেন। এতে বোঝা যায় সেই আপসরফা সাময়িক সুবিধা নেওয়ার জন্য ছাড়া আর কিছুই নয়।

ছাত্রদের একটা বড় অংশ প্রথম থেকেই এই চুক্তিকে ভালোভাবে দেখেননি। তারা চুক্তির বিষয়ে সন্দেহগ্রস্ত ছিলেন। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের অনেকে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা ভেবেছিলেন এই ধরনের প্রস্তাবের মধ্যে কিছুটা হলেও সত্যতা আছে। কিন্তু বিষয়টা এত সহজ ছিল না।

৬ এপ্রিল জিন্নাহর ঢাকা ত্যাগের পর রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে ওঠে। উপায়ন্তর না দেখে খাজা নাজিমুদ্দিন প্রাদেশিক গণপরিষদে বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা এবং ডাকটিকেট, ট্রেন টিকেট, স্কুলসহ সর্বত্র উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে একটি প্রস্তাব আনেন।

যদিও এই প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করার আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা। তারপরও এই প্রস্তাবকে তৎকালীন নেতৃবৃন্দ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে দেখেন। কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এই প্রস্তাবে কিছু সংশোধন এনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্যে একটি সংশোধনী প্রস্তাব করেন।

তার প্রস্তাবের তিনটি অংশ হল-

১. নাজিমুদ্দিনের প্রস্তাবিত কর্মসূচি আশু বাস্তবায়নের জন্য আশু পদক্ষেপ নেওয়া।

২. কেন্দ্রীয় সরকারসহ বিভিন্ন স্তরে বাংলার স্বীকৃতি।

৩. পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের পূর্ব-বাংলাসহ প্রতিনিধিদেরকে দ্বিতীয় প্রস্তাবের সপক্ষে বক্তব্য রাখার জন্য চাপ প্রদান।

ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সংশোধনী ব্যাপক বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত তার প্রস্তাবের প্রথম অংশকে বলবৎ রাখতে সক্ষম হন। বাকিগুলো প্রাদেশিক পরিষদের এক্তিয়ারে বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে খাজা নাজিমুদ্দিনের মূল প্রস্তাবটি প্রাদেশিক গণপরিষদে গৃহীত হয়।

এরপরেও ধীরেন্দ্রলাথ দত্তের সংশোধনীর মতো একের পর এক সংশোধনী উঠতে থাকে এবং যথারীতি মুসলিম লীগ সদস্যদের মাধ্যমে তা বাতিল হতে থাকে। এভাবে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের দাবির বিপরীতে নাজিমুদ্দিন সরকার ‘অবাস্তব অসুবিধাগুলো’ দূর করতে থাকে। যাকে অনেকে বাতিল অভিযান বলে অভিহিত করেন।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/আরকে/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৪)