ব্যর্থতার দায়ে ভাঙ্গা হচ্ছে মহানগর বিএনপি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে বর্তমান বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।
জানা গেছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সোমবার রাতে মহানগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মঙ্গলবার বা এর পর যেকোনো দিন আসতে পারে নতুন কমিটির ঘোষণা।
খালেদা জিয়া দলের মহানগর নেতাদের সঙ্গে সোমবারের বৈঠকের বিষয়টি দ্য রিপোর্টকে নিশ্চিত করেছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আবু সাঈদ খান খোকন। তিনি বলেন, ‘চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে মহানগর নেতাদের সঙ্গে ম্যাডাম বৈঠক করবেন। আমি শুনেছি শিগগিরই দলের মহানগর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পরদিনই কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে।’
জানা যায়, দীর্ঘ তিন মাস পর গত বৃহস্পতিবার রাতে বসা দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও দলের মহানগর কমিটির বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের ওই বৈঠকে এই প্রথমবারের মত কোনো রকম বিতর্ক ছাড়াই মহানগরে নতুন কমিটির ব্যাপারে একমত হন বলে নাম না প্রকাশের শর্তে দ্য রিপোর্টকে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। তিনি বলেন, ‘এ কথা তো দিবালোকের মত স্পষ্ট, গত মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের আন্দোলন সারাদেশে সফল হলেও ঢাকায় এসে মুখথুবড়ে পড়েছে। যেখানে তৃণমূল সফল হয়েছে, সেখানে ব্যর্থ হয়েছেন মহানগর নেতারা। এটা সাধারণ মানুষ যেমন জানে, তেমনি ‘ম্যাডামও’ (খালেদা জিয়া) খুব ভালোভাবেই জানেন। সময়ের দাবি মেনেই তিনি শিগগিরই মহানগর কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, প্রথমে ২১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। নগরীর সকল থানা ও ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের জন্য এই আহ্বায়ক কমিটিকে এক মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হবে। থানা-ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, কমিটি নিয়ে দু’ধরনের চিন্তা-ভাবনা করছেন বিএনপির হাই কমান্ড। একটি হচ্ছে-সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে মহানগর কমিটি। অপরটি হচ্ছে- মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপালনকারী মধ্যম সারির নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি।
সিনিয়র কমিটি হলে মহানগরের দায়িত্ব পেতে পারেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও মির্জা আব্বাসের মধ্যে যেকোনো একজন।
মধ্যম সারির নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি করা হলে সে ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মহানগর বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক আবু সাঈদ খোকন প্রমুখ নেতাদের নাম।
মহানগর কমিটি বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘কমিটি সম্পর্কে কানাঘুষা শুনেছি। কে বা কাকে ম্যাডাম দায়িত্ব দেবেন তিনিই ভালো জানেন। যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই তিনি দায়িত্ব দেবেন।’
জিজ্ঞাসার জবাবে খোকন বলেন, ‘আমি বিএনপির কামলা। ম্যাডাম যখন যে দায়িত্ব দেন, তা পালনের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি। কতটা সফল বা ব্যর্থ হই তা ম্যাডামই ভালো জানেন।’
এ ছাড়া বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেলদের মধ্য থেকেও আসতে পারে মহানগর নেতৃত্ব।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে আসলে কিছুই জানি না। যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তারাও কিছু জানেন না। তবে শুনেছি ঢাকা মহানগর বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিণ দু’ভাগে ভাগ করা হতে পারে।’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৪ মে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক এবং আব্দুস সালামকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের প্রায় তিন বছরেও নগর বিএনপি কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি এমনকি মহানগরীর ওয়ার্ডগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়নি।
(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/এসকে/সা/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৪)