ওয়ান অব দ্য ডমেনেটিং ড্র : মুশফিকুর রহিম
রবিউল ইসলাম, চট্টগ্রাম থেকে : এমন টেস্ট ড্র করে জয় ভাবছেন মুশফিকুর রহিম। দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই নিজের ও দলের পারফর্মমেন্স ঊর্ধ্বমুখী। নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাটিং-কিপিংয়েও রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু চাপের মুখে ম্যাচ ড্র করার সুযোগ আসেনি। তাই বলতে একটুও দ্বিধা করেননি; এটা- ‘ওয়ান অব দ্য ডমেনেটিং ড্র।’
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে আল-আমিনের বলের আঘাতে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে চোট পেয়েছেন মুশফিক। আঙুলে হালকা ফাটলও ধরা পড়েছে। শঙ্কাও ছিল। তারপরও খেলতে নেমেছেন দলের প্রয়োজনে। পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে। তাই ২ ম্যাচের টোয়েন্টি২০ সিরিজ খেলছেন না। তবে খুব দ্রুত সুস্থ হয়েই ওয়ানডে ফিরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মুশফিক। জানিয়েছেন, রবিবারই ফিরে যাচ্ছেন ঢাকায়। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, টেস্টের নানা বিষয় নিয়ে কথা। তারই চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
প্রশ্ন : টোয়েন্টি২০ স্কোয়াডে থাকছেন না। সতীর্থদের উদ্দেশে কী পরামর্শ থাকবে?
মুশফিক : নতুন যারা সুযোগ পেয়েছে তাদের জন্য শুভ কামনা। যারাই সুযোগ পেয়েছে তারা প্রত্যেকেই যোগ্য এ ফরম্যাটের ধারাবাহিক পারফর্ম করতে। ওরা শেষ দেড় বছর ধরে খেলে যাচ্ছে। আমি আত্মবিশ্বাসী, পুরো দল যেভাবে গত কয়েক বছর হোমে টোয়েন্টি২০ এবং ওয়ানডে খেলেছিলাম, তার ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। জয়-পরাজয় থাকবেই। যেহেতু, শর্টার ভার্সন; যে কেউই জিততে পারে। টোয়েন্টি২০ দলটায় আমাদের কিছু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন, আছেন মাশরাফি ভাই। এ ছাড়া বিজয়, ফরহাদ ভাই। এটা ভালো দিক। মিস করব অবশ্যই। অনেকদিন পর হোমে ২টি ম্যাচ মিস করব। আশা করি, খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে ওয়ানডে খেলার প্রস্তুতি নেব।
প্রশ্ন : ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় প্রথম টেস্ট বাজেভাবে হারতে হয়েছে। এ টেস্ট ম্যাচ ড্র; জয়ের সমান কিনা?
মুশফিক : জয়ের সমান হয়তোবা না। আমরা যেভাবে আউট হচ্ছিলাম। এ টেস্টে সে জায়গাটাতে আমরা ইমপ্রুভ করতে পেরেছি। তা আমাদের জন্য ভালো একটি দিক। আজ (শনিবার) সারাদিন এবং গতকাল (শুক্রবার) তামিম এবং শামসুর যেভাবে ব্যাটিং করেছে তা খুব ভালো ছিল। সম্ভবত আমি যতদিন খেলেছি এ প্রথম দেখলাম আমাদের ব্যাটসম্যানদের এত কমিটমেন্টসহ খেলতে। ইমরুল-সাকিব-মুমিনুল সবাই যেভাবে ক্রিজে থাকার চেষ্টা করেছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে ওয়ান অব দ্য ডমেনেটিং ড্র। অনেক সময় দেখা যায় একটি ম্যাচ ভালো খেললে ওই সুবাধে আমরা পুরো সিরিজ ভালো খেলি। যেহেতু, আমরা প্রথম টেস্ট বাজেভাবে হেরেছিলাম। এখানে আসার পর প্রথম ইনিংসেও আমরা খুব বাজে শট খেলেছি।আমাদের ওপর চাপ ছিল। তা ওভারকাম করে এমন একটা ভালো ড্র করা আমাদের জন্য ভালো একটি দিক।
প্রশ্ন : মুমিনুলের ওপর কতুটুকু আস্থা ছিল?
মুশফিক : চান্স পার্ট অব দ্য গেম। আমার মনে হয় না উইকেট খুব একটা সহজ ছিল। অবশ্যই ও যখন ক্রিজে যায়, শুধু ওর কথা বলব না বেশিরভাগ টপঅর্ডার যখন যায়; এটলিস্ট যে উইকেটেই হোক না কেন, ব্যাটসম্যানরা ভালো এবং বড় স্কোর করার চেষ্টা করে। অবশ্যই ওর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। ও যা বলল চাপে ছিল, ওর স্কোর একটা বা দুইটা ম্যাচ পরই চলে আসে। আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম ও যদি দ্রুত ২০ রান করতে পারে। তবে দলের যতটুকু দরকার ততটুকুই খেলবে। চা বিরতির পর ওকে বলতে হয়নি কতটুকু এবং কীভাবে খেলতে হবে। নিজেই বলছিল আমাকে আর এক ঘণ্টা ব্যাটিং করতে হবে। ও নিজের চিন্তা না করে দলের জন্য খেলছিল। এভাবেই আমরা সবাই দলের চিন্তা করি। আশা করব, ভবিষ্যতেও যেন এটা থাকে।
প্রশ্ন : দ্বিতীয় সেশনের একঘন্টা পর শামসুর-তামিমের উইকেট হারানোয় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন কিনা?
মুশফিক : ওই সময়ে একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিলাম। বামহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ওদের স্পিনারা ভালো বল করছিল। যেহেতু, উইকেট অনেক রাফ ছিল। তাই একটু উদ্বিগ্ন ছিলাম। তবে বিশ্বাস ছিল যে কেউ একটি জুটি করলেই কঠিন হবে না। আগের একজন ক্রিজে থাকেই। তার সঙ্গে গিয়ে জুটি বাঁধতে সুবিধা হবে।
প্রশ্ন : মেন্ডিস প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট পেয়েছিল। আর কোনো উইকেট পায়নি। কীভাবে খেললেন?
মুশফিক : মেন্ডিস বড় মাপের বোলার। প্রথম ইনিংসে ওর খুব বেশি উইকেট টেকিং বল ছিল না। আমাদের ব্যাটসম্যানদের ভুল শটে মেন্ডিস উইকেটগুলো পেয়েছে। ও বড় মাপের বোলার। কিন্তু উইকেটে ধারাবাহিক বল করলে যে সাহায্য পাওয়া যায় ও হয়ত তা পায়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে আমাদের ব্যাটসম্যানরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাটিং করেছে; লম্বা ইনিংস খেলেছে, বাজে বলগুলো ব্যবহার করেছে।
প্রশ্ন : একটি পেস বোলার নিয়ে খেলার পরিকল্পনা আসলে কী ছিল?
মুশফিক : আমার মনে হয়, দুটি উইকেট ছাড়া কোনো পেসারই উইকেট পায়নি। শুধু যে এ কারণে খেলা তা নয়। আমাদের লক্ষ্য ছিল ব্যাটিং শক্তি বাড়ানো। কারণ এ রকম উইকেটে প্রথম টেস্টে আমরা ব্যাটসম্যানরা খেলতে পারিনি। অনেক বিকল্প থাকলে, আমরা যাতে কমপক্ষে ভালো একটি স্কোর গড়তে পারি। তা প্রথম ইনিংসে হোক আর দ্বিতীয় ইনিংসে। আমরা টসে জিতলে অবশ্যই ব্যাটিং নিতাম। ওরা চতুর্থ ইনিংস উইকেট থেকে যে সুবিধা পেয়েছে। আমাদের স্পিনারা এর চেয়ে আরও বেশি সুবিধা পেত। সে চিন্তা করেই টিম কম্বিনেশন করা। প্রথম টেস্টে ৩ পেসার নিয়ে আমরা খেলেছি, খুব যে খারাপ বল করেছে তা নয়। আমাদের টিম কম্বিনেশনের জন্যই একজন পেসার নিয়ে খেলার পরিকল্পনা করি।
প্রশ্ন : আল-আমিন কেন পছন্দের তালিকায় ছিল?
মুশফিক : আল-আমিনের খেলোনোর কারণ একটাই, যে ৩ পেসার ছিল, তাদের মধ্যে ঢাকা সেরা ছিল আল-আমিন । এ ছাড়া রুবেলের সামান্য ইনজুরিও রয়েছে। রাজ ভাই খেলতে পারেনি। রাজ ভাই যদি পুরো খেলতে পারত; তবে স্কোরটা আরও ডিফারেন্ট হতে পারত।
(দ্য রিপোর্ট/আরআই/এএস/ওআইসি/সা/ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৪)