আল হেলাল শুভ, দ্য রিপোর্ট : মুরগির দাম বেড়েই চলেছে। কমছে না চালের দামও। মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মুরগির উৎপাদন কমে যাওয়ায় মুরগির দাম বেড়েছে। শীতকালীন সবজির দাম হাতের নাগালে থাকলেও মাছের দাম বেশ চড়া। শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, গত ২/৩ সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে বেড়ে যায় মুরগির দাম। এরপর মুরগির দাম বাড়তেই থাকে। প্রতি কেজি ব্রয়লার বাজারভেদে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। কিন্তু গত সপ্তাহেও এর দাম ছিল কেজি প্রতি ১৪০ টাকা। দেশী মুরগি প্রতিটি ২৪০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি দেশী মুরগির দাম ৬০-৭০ টাকা দাম বেড়েছে।

মুরগির বাড়তি দাম প্রসঙ্গে ভিন্ন কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। হাতিরপুল বাজারের মায়ের দোয়া পোল্ট্রি হাউসের মালিক আশরাফুল আলম কাঞ্চন বলেন, অনেক মুরগির ফার্ম বন্ধ। এ জন্য মুরগির বাচ্চা কম উৎপাদন হচ্ছে। তাই বাচ্চা মুরগির দামের সঙ্গে মুরগির দামও বেড়েছে।

তবে ভিন্ন কথা বলেন একই বাজারের শেখ কামরুল হাসান ও আব্দুল হালিম। তারা বলেন, শীতকাল হওয়ার কারণে রাজধানীতে এখন পিকনিক, বিয়েসহ নানা উৎসব চলছে তাই মুরগির দাম বেশি। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তারা।

অন্য মাংসের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি গরু ২৮০ টাকায় ও খাসি মানভেদে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতি পিস ইলিশ ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি জোড়া বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের গ্রিন রোড থেকে বাজার করতে আসা আকাশ ইসলাম জানালেন, মাছের দাম বেশ চড়া। ১ কেজি রুই মাছ ৪৫০ টাকা দিয়ে কিনেছেন বলেও জানান তিনি।

বিরোধী দলের অবরোধের পর থেকে গত এক-দেড় মাস ধরে চালের দাম বাড়তি। সে সময়ের চেয়ে বর্তমানে প্রতি কেজিতে চালের দাম ৮-১০ টাকা বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারে চাল ব্যবসায়ী আকিবুর রহমান বলেন, চালের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে, মিলাররাও দাম কমাচ্ছে না, তাই দাম বেড়েছে। আগামী বৈশাখের আগে চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।

কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল ৪৮-৫০ টাকায়, মিনিকেট চাল ৪৬-৪৮ টাকায় ও বি আর-২৮ চাল ৪২-৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত ২ সপ্তাহ আগে বিভিন্ন শীতকালীন সবজির দাম কমে। সবজির বাজারে সেই স্থিতিশীলতা বর্তমানেও বজায় রয়েছে। শনিবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানান, আলুর দাম রাজধানীর বাইরে আরও কম। আলু ঢাকায় আসার পর কিছু মধ্যস্বত্বভোগী এর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

হাতিরপুর কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, আড়তদাররা বলছেন, পরিবহন খরচ বেশি তাই ঢাকায় আসার পর আলুর দাম বেড়ে যাচ্ছে।

অন্য সবজির মধ্যে প্রতি কেজি টমেটো ২০-২৫ টাকায়, বেগুন ৫০ টাকায়, গাজর ২০ টাকায়, শিম ৩০ টাকায়, শসা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুল কপি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে। গত ২ সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি আলু ১০-১২ টাকায়, শিম ২০-৩০ টাকায়, গাজর ৩০ টাকায়, টমেটো ২৫-৩০ টাকায়, মরিচ ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

এদিকে মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে বেড়ে গিয়েছে করলার দাম। বাজারে প্রতি কেজি করলা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা দরে। নতুন বাজারে আসা ঢেড়স প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন আগামীতে ঢেড়সের দাম কমবে।

বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। পেঁয়াজের দাম আগামী দুই মাসের মধ্যে বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানালেন কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাদশা ব্যাপারী। পেঁয়াজের পর্যাপ্ত উৎপাদনই এর কারণ বলেও জানালেন তিনি।

অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে দেশী ডাল প্রতি কেজি ১১০-১১৫ টাকায় ও বিদেশী ডাল ৮০ টাকায়, রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬০৫-৬১০ টাকায় ও ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি হালি ২৮ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/এএইচএস/জেএম/এনআই/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৪)