দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : সেক্টর কমান্ডার ও রাজনীতিবিদ মেজর (অব.) এম এ জলিল বরিশালের উজিরপুরে ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে ৯নং সেক্টরে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন।

তার পুরো নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল। জোনাব আলী চৌধুরী ও রাবেয়া খাতুন দম্পতির এ সন্তান উজিরপুর ডব্লিউবি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫৯ সালে মেট্রিক পাস করেন৷ ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের মারি ইয়ং ক্যাডেট ইনস্টিটিউশন থেকে আইএ পাস করেন এবং এর পাশাপাশি গ্রহণ করেন সামরিক শিক্ষা৷ ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন৷ পরে মুলতানে কর্মরত থাকাকালে তিনি ইতিহাসে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন৷

১৯৬২ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ট্রেনি অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে তিনি কমিশনপ্রাপ্ত হন এবং ১২নং ট্যাঙ্ক ক্যাভারলি রেজিমেন্ট অফিসার হিসেবে পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন৷ ১৯৭০ সালে মেজর পদে উন্নীত হন৷ ১৯৭১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মায়ের অসুস্থতার জন্য এক মাসের ছুটি নিয়ে বরিশালে আসেন এবং মার্চে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন৷

মুক্তিযুদ্ধকালে হাইকমান্ড থেকে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুরের একাংশ, পটুয়াখালী-বরগুনাসহ ৯নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত করে মেজর জলিলকে ওই সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল টরকির হাসনাবাদে। হিঙ্গলগঞ্জে ক্যাপ্টেন হুদার নেতৃত্বে সেক্টর অপারেশন ক্যাম্প এবং শমসেরনগরে একটা নজরদারি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এর পরই শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ। ১৮ এপ্রিলের পর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মেজর জলিল একটি বড় বাহিনী গড়ে তোলেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনের সময়ে তিনি কাজ করেছিলেন। তিনি ছিলেন এ দলেন যুগ্ম আহ্বায়ক৷ ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন৷ ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন৷ ১৯৮৪ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন৷ পরবর্তী সময়ে জাসদ ত্যাগ করে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নামে একটি দল গঠন করেন৷

রাজনৈতিক কারণে তিনি কয়েকবার কারাবরণ করেন। প্রথমবার গ্রেফতার হন ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর।

তার লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- সীমাহীন সমর (১৯৭৬), দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনদর্শন, সূর্যোদয় (১৯৮২), অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা (১৯৮৯) এবং Bangladesh Nationalist Movement for Unity: A Historical Necessity.

তার স্ত্রীর নাম সায়মা জলিল। তাদের বিয়ে হয় ১৯৮২ সালে। তাদের দুই মেয়ে- সারাহ জলিল ও ফারাহ জলিল।

১৯৮৯ সালের ৫ নভেম্বর একটি ইসলামিক কনফারেন্সে যোগ দিতে তিনি পাকিস্তান যান। ১৯ নভেম্বর রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন৷ ২২ নভেম্বর তার মৃতদেহ ঢাকায় আনা হয় এবং সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এমএআর/এএল/ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৪)