খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : নির্বাচনী প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ির ৬ উপজেলার প্রতিটি জনপদ। নির্বাচনে বিজয়ী হতে সব প্রার্থীই চালাচ্ছেন জোর প্রচারণা। ভোটারদের মন জয় করতে তাদের বাড়ি বাড়ি ছুটছেন তারা। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। গণসংযোগ, স্লোগান আর মাইকিংয়ে মুখরিত শহরতলী থেকে গ্রামাঞ্চল। দলীয় নির্বাচন না হলেও দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারাও ছুটছেন প্রতিটি উপজেলায়। গণসংযোগ আর পথসভার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় মেতে উঠেছেন তারা।

জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় অনুষ্ঠিতব্য ৬ উপজেলায় ৩ লাখ ১৩৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৯ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৯ জন। ভোটকেন্দ্র ১৪৫ এবং বুথ ৯০৪টি।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ছাড়াও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ, জেএসএস সমর্থিত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৬ উপজেলার মধ্যে দুটিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও একটিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং কোথাও কোথাও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে- এমন ধারণা পর্যবেক্ষক মহলে। জেলা পর্যায়ের বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারাও ছুটছেন প্রতিটি উপজেলায়।

সারাদেশের মতো খাগড়াছড়িতেও উপজেলা নির্বাচনকে দুই বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ তাদের মর্যাদার লড়াই হিসেবে বিবেচনা করছে। এ কারণে উভয় দলের নেতারা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তারা ছুটছেন প্রতিটি উপজেলায়। প্রার্থীদের নিয়ে ঘুরছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে সব প্রার্থীই নিজেদের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও ভোটাররা বলছে তারা সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর পাশাপাশি যাকে নির্বাচিত করলে এলাকার উন্নয়ন হবে এমন প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।

খাগড়াছড়িতে প্রথম দফায় অনুষ্ঠিতব্য ৬টি উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সমর্থিত প্রার্থীরাও নানাভাবে আলোচিত। উপজেলা নির্বাচনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি; এ ছাড়া কোথাও কোথাও আঞ্চলিক রাজনৈতিক ইউপিডিএফ, জেএসএস (এমএনএল) সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শানে আলম (আনারস) বিএনপির কংচাইরী মগ (দোয়াত-কলম) ও ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে চঞ্চুমনি চাকমা (মোটরসাইকেল)। এ উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম রেজাউল করিম হেলাল (ঘোড়া) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সদর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তরুণ আলো দেওয়ান (বই), আওয়ামী লীগের সাহাব উদ্দিন সরকার (উড়োজাহাজ), জাতীয় পাটি (এরশাদ) নিরাপদ তালুকদার (চশমা), স্বতন্ত্র সুলতান উদ্দিন খান (তালা), সিংহ বিজয় চাকমা (টিয়াপাখি) ও রণিক ত্রিপুরা (টিউবওয়েল)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরনা চাকমা (কলস), আওয়ামী লীগের বাঁসুরী মারমা (ফুটবল) ও স্বতন্ত্র বিউটি রানী ত্রিপুরা (পদ্মফুল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রামগড় উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলত লড়াই হবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদ (ঘোড়া), আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী একেএম আলীম উল্লাহ (হেলিকপ্টার) ও নাগরিক কমিটির প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বেলায়ত হোসেন ভূঁইয়ার (কাপ-পিরিচ) এর মধ্যে। চেয়ারম্যান পদে অপর প্রার্থীরা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কাজী মো. সেলিম (আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন রিপন (দোয়াত-কলম), উশেপ্রু মারমা (টেলিফোন), চাইথোয়াই চৌধুরী (মোটরসাইকেল)।

রামগড়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আব্দুল কাদের (টিয়াপাখি), স্বতন্ত্র আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী (চশমা), মংসপ্রু কার্বারী (বই); মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী খাদিজা আক্তার (কলস), আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নাজমা বেগম (ফুটবল), আকলিমা সুলতানা (হাঁস) ও ঝর্ণা ত্রিপুরা (প্রজাপতি) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পানছড়িতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অনিমেষ চাকমা রিংক (মোটরসাইকেল), আওয়ামী লীগের বকুল চন্দ্র চাকমা (ঘোড়া) ও ইউপিডিএফ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমার (কাপ-পিরিচ) মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এ ছাড়াও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি জিমি চাকমা (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পানছড়িতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী রুমেল মারমা (টিয়াপাখি), আওয়ামী লীগের লোকমান হোসেন (চমশা), নন্দ দুলাল চাকমা (মাইক), মতিলাল চাকমা (তালা), ভূমিধর রোয়াজা (টিউবওয়েল), সিন্দু কুমার চাকমা (বই); মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী অপরাজিতা চাকমা (পদ্মফুল), ছখিনা বেগম (কলস), মনোয়ারা বেগম (ফুটবল), রত্মা তঞ্চঙ্গ্যা (হাঁস) রৌশনারা বেগম (প্রজাপতি) ও শুভ্রা চাকমা (তীর ধনুক) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মাটিরাঙ্গায় চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুল হক (মোটরসাইকেল ) বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম (আনারস)। এ উপজেলায় জামায়াতের মো. আলকাছ মিয়া (কাপ-পিরিচ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কাশেম ভূঁইয়া (দোয়াত-কলম)।

মাটিরাঙ্গায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন (চমশা), আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম (মাইক), জামায়াতের আমান উদ্দিন (টিয়াপাখি) ও জেএসএসের (এমএনএল) হেমেন্দ্র ত্রিপুরা (টিউবওয়েল), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোছা. মনোয়ারা বেগম (হাঁস), আওয়ামী লীগের হাছিনা বেগম (কলস) আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হোসনে আরা বেগম (পদ্মফুল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মানিকছড়িতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ম্যারাগ্য মারমা (দোয়াত-কলম), বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এনাম (আনারস) ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা এসএম রবিউল ফারুকের (মোটরসাইকেল) মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ধারণা করছে পর্যবেক্ষক মহল।

মানিকছড়িতে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. জাকির হোসেন (তালা) আওয়ামী লীগের তাজুল ইসলাম (টিউবওয়েল) স্বতন্ত্র জামাল উদ্দিন (উড়োজাহাজ); মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ফেরদৌসী বেগম (পদ্মফুল) আওয়ামী লীগের শাহেনা আক্তার (কলস) ও স্বতন্ত্র রাহেলা আক্তার (ফুলবল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মহালছড়ি উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নীলোৎপল খীসা (মোটরসাইকেল) ও ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সোনারতন চাকমার (দোয়াত-কলম) নাম বেশ আলোচিত। এ ছাড়া মহালছড়ি চেয়ারম্যান পদে জেএসএস (এমএনএল) গ্রুপের প্রার্থী বিমল কান্তি চাকমা (কাপ-পিরিচ) উপজেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি ক্যজাই মারমা (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বান্দ্বতা করছেন। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি।

মহালছড়িতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল আজিজ (তালা), ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী বিশ্বজিত চাকমা (চশমা), থুইহ্লাঅং মারমা (টিউবওয়েল), ক্যাচিং মিং চৌধুরী (উড়োজাহাজ) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেএসএস (এমএনএল) কাকলী খীসা (প্রজাপতি), জাহানারা বেগম (সেলাইমেশিন), ভূমিকা ত্রিপুরা (ফুটবল), হাসিনা বেগম (কলস), সুইনুচিং চৌধুরী (পদ্মফুল) ও স্বপ্না চাকমা (হাঁস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল খালেক জানান, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন কিনা- এ ব্যাপারে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এইচএমপি/ইইউ/এমডি/শাহ/ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৪)