‘না পড়িলে বই অন্ধকারে রই’
আলম তালুকদারের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার গালা গ্রামে। শিশুসাহিত্যে হাস্যরস ও বুদ্ধিদীপ্ত বক্তব্যের মাধম্যে গল্প-ছড়া-রূপকথায় তিনি নিজেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে নিজে কম মজার নন তিনি। আলম তালুকদারের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়েছে। উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- চাঁদের কাছে জোনাকি, যুদ্ধে যদি যেতাম হেরে, ছড়ায় ছড়ায় আলোর নাচন, ছড়া পড়লে চুল পাকে না, অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, নাই দেশের রূপকথা, ছড়াসমগ্র ও গল্পসমগ্র। আপাদমস্তক এই শিশুসাহিত্যিক লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জসীমউদদীন পুরস্কার, চোখ সাহিত্য পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল পুরস্কার ও অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার। বর্তমানে তিনি জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। দ্য রিপোর্টের পক্ষে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আদিত্য রুপু
এবার মেলায় আপনার কয়টি বই আসছে? কোন প্রকাশনী বের করছে?
এবার আমার মোট ৫টি বই আসছে। প্রায় সবই এরই মধ্যে চলেও এসেছে। ৫টিই শিশুসাহিত্যের বই। ‘নানাপদের ছড়া’ বের করেছে অনন্যা। ‘কুড়ি ও একুশের ছড়া’ বের করেছে বিভাস। বাংলাপ্রকাশ এনেছে ‘স্বপ্ন ঢোকে আমার বুকে’ এবং শব্দ প্রকাশ আনছে ‘ছড়ার জ্বলে সূর্য জ্বলে।’
প্রকাশিত নতুন বই সম্পর্কে বলুন?
এবারের বইগুলোর মধ্যে ‘জীবনী গ্রন্থমালা’ ও ‘ভীনদেশের লোককাহিনী’র বই বেশি লিখেছি। বরাবরের মতো ‘বিজ্ঞান কল্পকাহিনী’ ও ‘জীবজন্তু-পরিবেশ’ এর ওপরও বেরুচ্ছে বেশ কিছু বই। ছোটদের স্বপ্ন-রঙিন ভুবনের কথা তুলে ধরেছি আমার কিশোর কবিতার বইগুলোতে। এ ছাড়াও আসছে ১টি রম্য-রহস্যের বই।
বইকে কিভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বলে মনে করেন আপনি?
বইকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে সরকারের ভূমিকা অপরিসীম। পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিওগুলোকে। প্রতিটি জেলার স্কুলে যে ফান্ড থাকে বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের, সেখানে অন্তত ৫০ ভাগ টাকার বই কেনা হোক। এ ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ের বিত্তশালী লোকজন এগিয়ে আসতে পারেন এই রকম মহতি উদ্যোগে। তাতে উপকৃত হবে দেশ-জাতি। একটি রুচিশীল ও মননশীল সমাজ গঠনে আসুন আমরা নিজেদের শামিল করি।
মেলায় বই কেনার পরিকল্পনা নিয়ে বলুন?
বেশ কিছু বই মেলা থেকে কেনা হয় আমার। বই ছাড়া বাসায় ফেরা হয় না আমার। উপহার হিসেবেও হাতে আসে বই। সেখানে নতুন লেখক যেমন আছেন, তেমনি পুরনো লেখকরাও। প্রিয় ও পছন্দের বইগুলো আগে আগে কিনে ফেলি।
বইমেলার স্থান সম্প্রসারণের বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
কেউ কেউ মনে করছেন বইমেলা বিভক্ত হয়েছে। আসলে মেলাকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে বলেই আমি মনে করি। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের দুই ময়দানে চলছে একুশে বইমেলা। খোলামেলা ও মনোরম পরিবেশে পাঠকরা প্রিয় বইটি কিনছেন আরামে। সময়োপযোগী এই সিদ্ধান্তে লাভবান হবেন প্রকাশকরা। তারা তাদের লগ্নি করা টাকা এবার তুলে আনার চেষ্টা করবেন নতুন এই পরিবেশে।
আমাদের শিশুসাহিত্য নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
আামাদের শিশুসাহিত্য আমাদের গর্ব। অল্পকিছু বিশ্ব সাহিত্য পড়ে যারা লাফিয়ে বেড়ান তাদের বলব, বেশি করে আমাদের শিশুসাহিত্য পড়ুন। আমাদের শিশুসাহিত্যে রত্নতুল্য যে সমস্ত লেখা আছে, তা বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। আমাদের শিশুসাহিত্য নিয়ে দ্রুত আরও কাজ করা উচিত। লেখক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অনুবাদ করা উচিত। মোটকথা আমাদের সাহিত্যের ক্ল্যাসিক লেখাগেুলোর অধিকাংশই কিন্তু শিশু-কিশোর সাহিত্য।
ছোটদের জন্য কিছু বলুন?
ছোটদের বলব- ‘পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই।’ এই বক্তব্যের তাৎপর্য বোঝার চেষ্টা কর। বেশি করে বই পড়। অভিভাবকদের বলব- আপনার বাসায় বইবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলুন। পড়ার অভ্যাস না থাকলে প্রথমে আপনি পড়া শুরু করুন। আপনার দেখাদেখি আপনার শিশুও হয়ত হয়ে উঠবে বাংলা সাহিত্যের একজন বিচক্ষণ পাঠক।
(দ্য রিপোর্ট/এআর/এনআই/এইচএসএম/শাহ/ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৪)