লিয়াকত আলী খানের ঢাকা সফর
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন। পূর্ব-পাকিস্তানের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও তিনি রাষ্ট্রভাষার ক্ষেত্রে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন।
১৯৪৮ সালের ১৮ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। এর আগে ১৭ নভেম্বর আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের এক সভায় আজিজ আহমদ, আবুল কাশেম, শেখ মুজিবুর রহমান, কামরুদ্দীন আহমদ, আবদুল মান্নান, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ একটি স্মারকলিপি প্রণয়ন করেন। পরে সেটি প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কোনো সাড়া দেননি।
২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে তিনি এক ছাত্রসভায় ভাষণ দেন। ওই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে প্রদত্ত মানপত্রে বাংলা ভাষার দাবি পুনরায় উত্থাপন করা হয়।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অন্যান্য দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা ও গণপরিষদে গৃহীত প্রস্তাবের পূর্ণ বাস্তবায়ন করার দাবিনামাটি তৈরি করেন আব্দুর রহমান চৌধুরী (পরবর্তীতে বিচারপতি)। দাবিনামা পাঠ করার দায়িত্ব ডাকসুর তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত হলেও তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ‘বাংলাকে হিন্দুয়ানী ভাষা’ হিসেবে প্রচার করার পাকিস্তানি চেষ্টার কারণে দাবিনামাটি পাঠের দায়িত্ব দেওয়া হয় তৎকালীন জিএস গোলাম আযমকে (পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর আমির)। ১৯৭১ সালে গোলাম আযম রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে এই অবস্থানকে ভুল বলে অভিহিত করেন।
গোলাম আযম সমাবেশে দাবিনামাটি পাঠ করেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান রাষ্ট্রভাষাসংক্রান্ত দাবিটি এড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত কয়েকটি দাবি মেনে নেন। রাষ্ট্রভাষাসংক্রান্ত দাবিটি এড়িয়ে যাওয়ায় সমাবেশস্থলে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।
লিয়াকত আলী খান ঢাকায় আসার আগে ঢাকায় ছাত্ররা প্রাতিষ্ঠানিক কিছু সমস্যার সমাধানের জন্যও আন্দোলন করেন। এর মধ্যে ছিল কামরুন্নাহার স্কুলের বিলুপ্তি এবং ইডেন ও কামরুন্নাহার স্কুলের একত্রীকরণ। একই সময়ে ঢাকা সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্ররা কিছু সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করে।
১৯৪৮ সালের আরও উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে রয়েছে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঢাকা ত্যাগ। ভারত-পাকিস্তান ভাগের প্রায় বছরখানেক পর তিনি ঢাকায় আসেন। এককালের বাংলার প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও নাজিমুদ্দিন সরকার তাকে জোরপূর্বক ঢাকা ত্যাগে বাধ্য করেন। এ ঘটনা বাংলার জনমনে প্রভাব ফেললেও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। কিন্তু এ ঘটনাটি অন্য কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বুঝা যায়- শাসকগোষ্ঠী কোনোভাবেই এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিকারীদের সহ্য করতে পারছিল না।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/শাহ/ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৪)