দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী দেশের ধান গবেষকদের উদ্দেশে একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আমার সন্তানরা যেন থাকে দুধে ভাতে।’

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৫ দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা ২০১২-২০১৩ এর উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তেব্য এ কথা বলেন তিনি।

রবিবার ব্রি মিলনায়তনের এ সভায় কৃষিমন্ত্রী দেশের ধান গবেষকদের বিভিন্ন সাফল্যের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘ধান গবেষণায় সাফল্য না থাকলে দেশ এগোতে পারত না। আপনারা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি। দেশকে এগিয়ে নিতে আরও সাফল্য অর্জন করতে হবে। সাফল্যের কোনো শেষ সীমা নেই।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘সিদ্ধ চালের বদলে আতপ চালের ভাত খেতে পারলে সময় ও জ্বালানির অপচয় রোধসহ নানা দিক দিয়ে উপকার হতো। আপনারা এমন ধানের জাত উদ্ভাবন করুন যার চাল একবার রেধে দু’বার খাওয়া যায়। দেশের মানুষের রুচির সঙ্গে খাপ খায় এমন ধান উদ্ভাবন করুন।’

বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আবিষ্কারের আনন্দের চেয়ে মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব বেশি বড়।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘নানা দিক বিবেচনায় এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের সরকার কৃষির জন্য দক্ষিণাঞ্চলকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই পটুয়াখালীর বাঁশবাড়িতে বীজ বর্ধন খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতি যাদের প্রেম থাকে, ভালবাসা থাকে, তাদের একটা ভিশন থাকে। ভবিষ্যত ভাবনা থাকে। তাইতো আমাদের নেত্রী গতবার ক্ষমতায় এসে ভিশন ২০২১ ঘোষণা করেছিলেন। আর এবার ভিশন ২০৪১ ঘোষণা করেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ভিশন ছিল বলেই দেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নকামী প্রথম সারির ২০টি দেশের মধ্যে ৫ম স্থানে উঠে এসেছে।’

বিরোধীদের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ওনারা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ঠেকাতে চেয়েছিলেন। ভোটতো দূরের কথা ওনারা বই দেওয়াই থামাতে পারেননি। আমারা মুক্তিযুদ্ধ করে এসেছি। রাজাকারেরা আমাদের কীভাবে ঠেকাবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘ওনারা নগদ-নারায়ণে বিশ্বাসী। ওনাদের ভবিষ্যতের দায়িত্ববোধ- দেশপ্রেম এসব থাকবে কীভাবে?’

মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘৪০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা গতবার ক্ষমতায় এসেছিলাম। বঙ্গবন্ধু যখন ক্ষমতায় আসেন তখন দেশে কোনো খাদ্য গুদাম ছিল না বললেই চলে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু বিদেশ থেকে গম কিনে আনিয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশিদের ইঙ্গিতে সে জাহাজ অন্য পথে ঘুরে যায়।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট কোনো দুর্ভিক্ষ ছিল না। সেটা ছিল পরাশক্তিধর রাষ্ট্র সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। কিন্তু সেটি প্রচার করার মতো এতো সাহসী সংবাদপত্র ও মিডিয়া তখন ছিল না। সে সময় এমন আবহাওয় তৈরি হয়েছিল যা প্রচার করার মতো সাহস কেউ দেখায়নি।’

মতিয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পার্লামেন্টে দাঁড়িযে সেকথা স্বীকারও করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ছিল মানুষের প্রতি অগাধ আস্থা আর ভালবাসা। বিদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার সাফল্য হলো জনগণের প্রতি ভালবাসা, আর দুর্বলতা হলো জনগণকে বেশি ভালবাসা।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. এস এম নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গাজীপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ম. জাহিদ আহসান রাসেল। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ম. কামাল উদ্দিন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (দায়িত্বরত) ম. আবু হানিফ মিয়া প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/এম/এমএটি/এনডিএস/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৪)