৯ সচিবের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক
সরকারের সাবেক ও বর্তমান নয়জন সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদের মধ্যে আটজন বর্তমান ও একজন সাবেক সচিব রয়েছেন। পৃথক পৃথক দুর্নীতির অভিযোগে এদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। কমিশন সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
এরা হলেন- প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন (সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব), স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞা (এমএম নিয়াজ উদ্দিন), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব কে. এইচ. মাসুদ সিদ্দিকী, যুগ্ম-সচিব আবুল কাসেম তালুকদার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (ভারপ্রাপ্ত) সচিব এ. কে. এম. আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব (বর্তমানে বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান) মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব তাপস কুমার রায় ও যুগ্ম-সচিব আনোয়ার হোসেন।
জানা গেছে, সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন এমন অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। সম্প্রতি এ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক যতন কুমার রায়কে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা এবং উপ-পরিচালক বেনজীর আহম্মদকে এর তদারককারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর অভিযোগও অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন (সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব) দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত দুটি অভিযোগই সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন নতুন করে কোনো প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তবে প্লট বরাদ্দের কাজ করতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। অতীতের কিছু কাজ আমরা সময় হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। প্রধানমন্ত্রী এর আগেরবার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন আমার গেজেট প্রকাশ হয়। সেখানে আমার পিতার নামের বানানে ভুল ছিল। সেই ভুল বানান ঠিক করতে আমি আবেদন করি। এবার সংশোধিত গেজেটে তা প্রকাশ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এবার আমার নাম লেখা হয়নি। আমার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন এমন অনেকেই এখনও বেঁচে আছেন।’
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, একই অভিযোগ রয়েছে আরও তিন সচিব, সাবেক এক সচিব ও একজন যুগ্ম-সচিবের বিরুদ্ধে। এদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। চাকরির বয়স শেষ হওয়ার মুহূর্তে এসে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগে এ সব অনুসন্ধান করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে এ সব অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। অনুসন্ধান পর্যায়ে ওই সচিবদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ভুয়া কি না তা যাচাই করা হবে। এ অভিযোগে অভিযুক্তরা হলেন- স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব কে. এইচ. মাসুদ সিদ্দিকী, যুগ্ম-সচিব আবুল কাসেম তালুকদার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব এ. কে. এম. আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব (বর্তমানে বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান) শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান।
মুঠোফোনে স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি দেশের বাইরে ফ্রান্সে আছি। এ ব্যাপারে পরে কথা হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বর্তমানে আমি বেসরকারিকরণ কমিশনের দায়িত্বে আছি।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব এ. কে. এম. আমির হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব কে. এইচ. মাসুদ সিদ্দিকী।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব তাপস কুমার রায় ও যুগ্ম-সচিব আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ কমিশনে জমা পড়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান অভিযোগটি পরীক্ষার জন্য বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্তের মহাপরিচালক ব্রি. জে. (অব.) এম. এইচ. সালাহউদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা অর্জনের আলোকে উৎসব ও জাতীয় বিদ্যুৎ সপ্তাহ ২০১৩ পালন উপলক্ষে মোট ১০ কোটি টাকা চাঁদা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে বিপিডিবি, পিজিসিবি, ডেসকো, ডিপিডিসি, ইজিসিবি, এসডব্লিউপিজিসিও, এনডব্লিউপিডিসিও, এপিএসসিএল, আরপিসিএল-এর কাছ থেকে চার কোটি এবং সামিত গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, এস. আলম গ্রুপ ইত্যাদির কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। কর্মসূচি পালনে মোট তিন থেকে চার কোটি টাকা খরচ হয়। বাকি টাকা বিদ্যুৎ সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম-সচিব পাচারের মাধ্যমে আত্মসাত করেন। চাঁদা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের কাজে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ওই তিন কর্মকর্তা ক্ষমতা বলে বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানির চেয়ারম্যান। অসাধু কর্মকর্তাদের নিয়ে তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির আখড়া। বিদ্যুৎ সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম-সচিব মাসে দুই থেকে তিনবার বিদেশ ভ্রমণ করেন। মূলত অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করতে তারা ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেন।
(দ্য রিপোর্ট/ এইচবিএস/ এইচএসএম/ এনআই/ ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৪)