জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি আপিল বিভাগে
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করা বা না করা নির্ভর করছে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপর। কেননা হাইকোর্টের রায়ে দলটিকে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত দেন তার ওপর নির্ভর করছে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন এখনই বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করা হবে, নাকি আপিল নিষ্পত্তির পর।
এর আগে রায় স্থগিতের আবেদন জানানো হলেও ঐ সময় আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ দেননি। এখন নিয়মিত আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত দেন তার ওপরই নির্ভর করছে দলটির নিবন্ধন ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া।
কেননা রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন না থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না দলটি। ফলে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি গেজেট প্রকাশ করবে কিনা, দলটি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা এসব প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাইকোর্টের রায় পাওয়ার পর ইসি চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে আপিল বিভাগ যদি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন তাহলে তা সম্ভব নয়।
আবার আপিল নিষ্পত্তির আগে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ইসির নেই বলেও মত দিয়েছেন তারা। তবে আপিল বিভাগের রায়ে যদি হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হয় সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মহসিন রশিদ জানান, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি রায়ের কপি পাওয়ার পর গেজেট জারি করতে পারবে। তবে আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ যদি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন তাহলে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা থাকবে না। ফলে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী আর ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকবে না ইসির।
তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের রায়ের আলোকে ইসি গেজেট প্রকাশ করার পরও যদি আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন তাহলেও ইসির প্রকাশ করা ওই গেজেটের কার্যকারিতা থাকবে না। ফলে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন জানিয়েছেন, “রায়ের সার্টিফায়েড কপি এখনো আমরা হাতে পায়নি। রায় পাওয়ার পর আমরা নিয়মিত আপিল করবো।” একইসঙ্গে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, আপিল নিষ্পত্তির আগে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ইসির নেই।
এদিকে শনিবার জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু এ রায়ের সার্টিফায়েড কপি প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, সার্টিফায়েড কপি সরবরাহ করতে আরো বেশ কয়েকদিন লাগতে পারে।
গত ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দেন।
বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এ রায় ঘোষণা করে। রায়ে বিচারপতি এম. মোয়াজ্জেম হোসেন জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করার বিপক্ষে মত দিয়েছিলেন।
ওই সময়ই রায়ের বিরুদ্ধে সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে দলটিকে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেন হাইকোর্ট। সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য তিন বিচারপতিই মত দেন।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে দেয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের সভাপতি হুমায়ূন কবির, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হাসানসহ ২৫ ব্যক্তি। ওই রিটের শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন।
দীর্ঘদিন পর গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে রিট আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানির জন্য একটি বেঞ্চ নির্ধারণ করতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চকে রুলের শুনানি করতে নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি। গত ১০ মার্চ আবেদনটি শুনানির জন্য উত্থাপিত হয়।
এ সময় এই আবেদনের সঙ্গে সাংবিধানিক ও আইনগত প্রশ্ন জড়িত থাকায় বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের জন্য বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন হাইকোর্ট। পরে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন। এ বেঞ্চে গত এপ্রিলে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়। গত ১২ জুন শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএবি) রাখা হয়।
(দিরিপোর্ট২৪/এজেপি/এআইএম/এমডি/নভেম্বর ০৪, ২০১৩)