আরিফ সাওন, বাগেরহাট : সুন্দরবনের চাদপাই, দুধমুখী ও ধানমারি ডলফিনের অভয়াশ্রম হলেও জেলেদের জালে ও প্রাকৃতিক কারণে মারা পড়ছে ডলফিন। শুধু সুন্দরবন পূর্ব এলাকায় প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ডলফিন জেলেদের জালে বা চরে আটকে মারা যায় বলে ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির গবেষণায় উঠে এসেছে।

তাই ডলফিন রক্ষায় ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ব্যতিক্রমধর্মী মাসব্যাপী ‘ডলফিন মেলা’ আয়োজন করেছে।

ডলফিন ও তিমি সুরক্ষায় ভাসমান নৌকায় শুরু হওয়া মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী আগামী ২ মার্চ খুলনায় শেষ হবে। আয়োজকরা জানিয়েছেন ৬ ফেব্রুয়ারি মংলায় প্রদর্শনী শুরু হয়।

ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির এ প্রকল্পের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কো-অডিনেটর ফারজানা আকতার জানান, বাগেরহাট শহর সংলগ্ন ভৈরব নদের মাঝিঘাটে শনিবার এসে প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। রবিবার রাতে তারা বাগেরহাট মাঝিঘাট ত্যাগ করবেন। এ নৌকা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, বরিশালের তুষখালী হয়ে খুলনার দিকে গিয়ে শেষ হবে। খুলনা, বাগেরহাট ও বরিশালের সুন্দরবন ও উপকূলবর্তী ১৫টি স্থানে এ প্রদর্শনী হবে।

ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির এ প্রকল্পের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পরিচালক এলিজাবেথ ফাহর্নি মানসুর জানান, গত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা সুন্দরবনসহ বঙ্গোপসাগর উপকূলে ডলফিন নিয়ে গবেষণা করছেন। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক এ সংগঠনটি বাংলাদেশে ডলফিন ও তিমি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। জেলেদের জাল এবং সুন্দরবন ও উপকূলীয় সাগর এলাকায় পানিতে পরিবেশে দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকায় এদের জীবন ঝুঁকির মুখে পতিত হয়। শুধু সুন্দরবন পূর্ব এলাকায় প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ডলফিন জেলেদের জালে বা চরে আটকে মারা যায়।

তিনি জানান, তাদের ধারাবাহিক গবেষণার বিভিন্ন উপাত্তকে সুন্দরবন ও সাগরে আসা জেলে, সংলগ্ন এলাকার গ্রামীণ মৎস্যজীবী, শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের কাছে সহজভাবে তুলে ধরতে তারা এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন।

প্রদর্শনী কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে রয়েছে ডলফিনের কংকাল, দাঁত, ছবির মাধ্যমে ডলফিন ও তিমি চেনার উপায়, বিভিন্ন ধরনের ডলফিনের প্রতিকৃতি, ডলফিন রক্ষায় করণীয় বিষয়ক মতামত, সুন্দরবনে ডলফিনের তিনটি অভয়ারণের মানচিত্র, মানুষের সঙ্গে স্তন্যপায়ী এ প্রাণীর সম্পর্ক ও সাদৃশ্য বিষয়ক তথ্যচিত্র, এদের জীবনযাত্রা ও উপকারী কার্যক্রম বিষয়ক তথ্য ইত্যাদি।

মেলা দেখতে আসা বাগেরহাট সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ হায়দার বলেন, ‘মেলায় এসে নতুন নতুন অনেক তথ্য জানতে পেরেছি। যা আগে আমি জানতাম না। যেমন- ডলফিন পানির নিচে বসে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে না। পানির উপরে উঠে ডলফিনকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয়। সাগর থেকে আসা ডলফিন আমাদের আশপাশে থাকা ছোট ছোট নদী-খালে ঢুকে পড়ে। অনেক সময় ডলফিন এ সব নদীতে মাছ ধরার জালে ধরা পড়ে মারা যায়। জেলেরা যাতে ডলফিন শিকার না করে সে বিষয়ে তাদের সচেতন করতে ওনারা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন।’

একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী অভ্রজ্যোতি বলেন, ‘সাধারণ মাছ শিকার করতে যেয়ে জেলেরা অনেক সময় ডলফিন শিকার করে থাকে। বিলুপ্ত এ ডলফিনকে রক্ষা করতে আমাদের সচেতন হতে এবং জেলেদের সচতেন করতে পরামর্শ দিয়েছেন আয়োজকরা। বাংলাদেশ ছাড়া ভারত ও নেপালের মিঠে পানির নদীতে ডলফিনের বসবাস রয়েছে বলেও আমরা জানতে পারি।’

(দ্য রিপোর্ট/এএস/এনডিএস/সা/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৪)