শুদ্ধি অভিযান শুরু করছেন খালেদা জিয়া
একাদশ জাতীয় নিবার্চনকে লক্ষ্য করে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দল গোছানোর কাজে হাত দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিগত দিনের আন্দোলনের সফলতা-ব্যর্থতা মূল্যায়ন করে অযোগ্যদের বের করে যোগ্যদের স্থান দিতে শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। আন্দোলন-সংগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর মহানগর বিএনপি দিয়েই এ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, দলের প্রতি আনুগত্য, ত্যাগ, দুর্নীতির কলঙ্ক থেকে মুক্ত, নেতাকর্মী ও সমাজে গ্রহণযোগ্য, উচ্চশিক্ষিত এমন নেতাদের নিয়েই এবার দল পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া।
সূত্র জানায়, শুদ্ধি অভিযানে দলে টিকে থাকতে ইতোমধ্যেই অনেক ‘নিষ্ক্রিয় ও আয়েশি’ নেতা নিজেকে জানান দিতে মাঠে নেমে পড়েছেন। দশম জাতীয় নিবার্চনের ট্রেন মিস করে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য তারা কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা স্ব-স্ব এলাকার উপজেলা নিবার্চনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করে নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণে সচেষ্ট হয়েছেন। ‘পারফরমেন্স’ দেখিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন অনেকেই।
বিএনপি সূত্র জানায়, নেতাকর্মীদের ‘পারফরমেন্স’নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছেন খালেদা জিয়া। যে কারণে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার সাংগঠনিক সফর স্থগিত করে উপজেলা নির্বাচনে মনোযোগী হতে সিনিয়র নেতাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা মহানগরীতে শক্ত অবস্থান তৈরির জন্য নতুনভাবে উদ্যোগ নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। ব্যর্থ ও নেতিবাচক ইমেজের নেতাদের বাদ দিয়ে পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসতে চাচ্ছেন তিনি। মহানগর কমিটি পুনর্গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার পতনের লক্ষে এগিয়ে যেতে চান তিনি। সোমবার রাতে তিনি মহানগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মঙ্গলবার বা তারপর যে কোনো দিন আসতে পারে নতুন কমিটির ঘোষণা। বৈঠকের বিষয়টি দ্য রিপোর্টকে নিশ্চিত করেছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ খান খোকন।
খোকন বলেন, চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে মহানগর নেতাদের সঙ্গে ম্যাডাম বৈঠক করবেন। আমি শুনেছি শিগগিরিই দলের মহানগরের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরদিনই কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে।
দলীয় সূত্র জানায়, সরকারকে খুব বেশি সময় দিতে না চাইলেও এ জন্য নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দিতে চান না ১৯ দলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়া। রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে ৪ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি অতি দ্রুত অবাধ ও সুষ্ঠু নিবার্চন চায়। দলের নেতাকর্মীরা কারাগারে। অনেকেই মারা গেছেন। এই অবস্থায় বেশি দিন চলবে না। সবকিছু গুছিয়ে নিই। অচিরেই নতুন কর্মসূচি দেব।
নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে ঢাকাসহ সারাদেশেই দলের সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী করতে চায় বিএনপি। এ জন্য শিগগিরিই কেন্দ্রীয় কমিটিসহ যে সব জেলা কমিটি দুর্বল সেসব জেলা কমিটি পুনর্গঠন করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটিও পুনর্গঠন করা হবে। নতুন নেতৃত্বকে সুযোগ দেওয়া হবে। আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে সক্রিয় নেতাদের দলে স্থান দেওয়া হবে।
দল পুনর্গঠন সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত দল পুনর্গঠন করা হবে।
এ বিষয়ে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা সম্পর্কে জেনারেল মাহবুব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করেন। আমাদের সেই লক্ষ্য নিয়েই এগুতে হবে। মাড্যামের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা আছে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এইচএসএম/এনআই/ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৪)