দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : পটুয়াখালী-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমানের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জরুরিভিত্তিতে নথিপত্র তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয় থেকে সোমবার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে নথিপত্র তলব করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক খায়রুল হুদা এ চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় এ সব নথিপত্র সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক খায়রুল হুদা দ্য রিপোর্টকে নথিপত্র তলবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) কাছে সংসদ সদস্য মাহবুবুর এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে বাড়ি বা ফ্ল্যাটসংক্রান্ত সকল নথি চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের (জিপিও) কাছে সঞ্চয়পত্র সংশ্লিষ্ট সকল নথি চাওয়া হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে এমপিসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে লেনদেনকৃত বিভিন্ন শেয়ার, ডিবেঞ্চারসহ সংশ্লিষ্ট সকল নথি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (বিআরটিএ) কাছে মাহবুবুর পরিবারের সকলের ব্যক্তিগত বা অন্য পরিবহনের মালিকানা সংক্রান্ত নথি চাওয়া হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) কাছে রাজধানীতে অবস্থিত এমপি ও তার পরিবারের নামে প্লট, আবাসিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া পটুয়াখালী জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের কাছে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে ক্রয় অথবা বিক্রয়কৃত সকল ধরনের নথি চাওয়া হয়েছে।

এর আগে, খায়রুল হুদা গত ৩ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এমপি মাহবুবুরের আসন পটুয়াখালী এলাকায় অভিযান চালান। ওই সময় জেলা রিটার্নিং অফিসের কাছ থেকে নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামা সংগ্রহ এবং উপজেলা নির্বাহী অফিস, মৎস্য অফিস, ভূমি ও সাবরেজিস্ট্রার অফিস থেকে বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করেন।

জানতে চাইলে উপ-পরিচালক খায়রুল হুদা দ্য রিপোর্টকে জানান, কিছু নথিপত্রের পর্যালোচনা চলছে। আরও কিছু নথিপত্র তলব করা হয়েছে। সব নথি পর্যালোচনা শেষে এমপি মাহবুবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে।

এমপি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি গত পাঁচ বছরে ২০ একর জমি থেকে ২ হাজার ৮৬৫ একর জমির মালিক হয়েছেন। নবম সংসদের হলফনামা অনুসারে ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ছাড়া কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ না থাকা স্ত্রীর নামে এখন ১ কোটি ২৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। নিজের ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ১১২ টাকার স্থাবর সম্পদ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭২ টাকা।

২০০৮ সালের হলফনামায় সাতটি আয়ের উৎস খাতের মধ্যে তার একমাত্র আয় ছিল খণ্ডকালীন রাখী মালামাল থেকে, যার পরিমাণ ছিল বছরে মাত্র ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তিনি এখন মৎস্য উৎপাদন ও বিক্রয়কারী। আর এ খাত থেকে তার বছরে আয় হচ্ছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আগে তার ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও এখন তার ওপর নির্ভরশীলদের ব্যবসা থেকে বছরে আয় ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া চাকরি থেকে তার বছরে আয় ২০ লাখ ৩৪ হাজার ৭০০ টাকা।

প্রসঙ্গত, ১২ জানুয়ারি কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে মাহবুবুর রহমানসহ সাতজনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/এমএআর/শাহ/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪)