সাংহাইয়ের জমজমাট বিয়ের বাজার
দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : বিয়ের জন্য মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পেতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন অনেকেই। তাদের এই কষ্টের কথা চিন্তা করেই চীনের সাংহাইয়ে গড়ে ওঠেছে জমজমাট বিয়ের বাজার।
আক্ষরিক অর্থেই বিয়ের বাজার। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়েদের মা-বাবা কিংবা মামা-চাচারা তাদের সন্তানের জন্য মি. অথবা মিস রাইটের খোঁজে ভিড় জমান সাংহাইয়ের পিপলস পার্কের এই বিয়ের বাজারে।
বিয়ের বাজারে এসে সাংহাইয়ের বাসিন্দা লিউ জিয়ানলে খুব খুশি। কারণ তিনি বিজ্ঞাপনের বোর্ডে সাঁটা বিজ্ঞাপন থেকে তার সদ্য ডিভোর্সি ভাগ্নের জন্য মনের মতো পাত্রী খুঁজে পেয়েছেন।
৩৩ বছর বয়স, পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি লম্বা, ১৪০ পাউন্ড ওজন, সম্পদের মালিক, ডির্ভোসি তবে সন্তান নেই। এই হলো লিউয়ের ভাগ্নের বিবরণ।
একটাই সমস্যা, তার ভাগ্নের বেতন মাসে ৮০০ মার্কিন ডলার, যা খুব বেশি না হলেও সাংহাইয়ে এতে ভালোই চলে যাবে বলে লিউয়ের বিশ্বাস। ভাগ্নের বিবরণও বিজ্ঞাপনে লিপিবদ্ধ করেছেন লিউ।
বিয়ের বাজারে লিউয়ের পদচারণা নতুন নয়। গত বছর এখান থেকেই ছেলের জন্য বউ খুঁজে পেয়েছেন লিউ। তার ছেলের বউ পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা ও সিনেমার তারকাদের মতোই সুন্দর বলে জানালেন লিউ।
এই বাজারে কেউ কেউ আসেন বিয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে। আরেক দল আসেন নোটবুক হাতে; যেসব বিজ্ঞাপন দেয়া আছে- সেগুলো থেকে তথ্য টুকে নিতে।
বিয়ের বাজারে বিদেশে থাকা পাত্র-পাত্রীদের জন্যও একটি কর্নার আছে। এক ভদ্রমহিলাকে দেখা গেলো, টরেন্টোতে হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত তার ৩৬ বছর বয়সি মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে।
চীনের তরুণদের ভালোবাসার খোঁজ করার আগে পড়াশুনা ও চাকরিতে মনোযোগ দিতে বলা হয়। এজন্য পরে বিয়ের জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। মা-বাবাও বংশরক্ষার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েন। মা-বাবার চিন্তা লাঘবে পরবর্তীতে অনেকেই জীবনসঙ্গী খুঁজতে রীতিমতো যুদ্ধই করেন।
উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা শেষ পর্যন্ত পেশাদার ঘটকের দারস্থ হয়।
এমনকি তরুণদের ভালোবাসার সন্ধান দিতে সাংহাইতে বার্ষিক ভালোবাসা ও বিয়ে মেলারও আয়োজন করা হয়েছে।
এসব কারণেই সাংহাইয়ে গড়ে ওঠেছে বিয়ের বাজার। ২০০৪ সাল থেকে এ বাজারের কার্যক্রম চলছে বলে জানান ওই পার্কের একটি পেশাদার ম্যাচমেকিং সার্ভিসের পরিচালক লি।
তিনি বলেন, পুরুষদের তুলনায় নারীদের সঙ্গী খোঁজার হার তিনগুণ। তাই সফলভাবে বিয়ে দেয়াটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
বিয়ের বাজারে পুরুষরা বিনামূল্যে নিবন্ধন করতে পারে। কিন্তু নারীদের এজন্য গুণতে হয় পাঁচশ মার্কিন ডলার।
নিবন্ধনের জন্য বয়সসীমাও আছে। ১৯৭০ সালের পর জন্ম নেয়া পুরুষরা নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে নিবন্ধনের জন্য মেয়েদের বয়স অবশ্যই ৩৩ বছরের নিচে হতে হবে।
যোগ্য পুরুষের অভাব রয়েছে বলেই এই পার্থক্য— অনেকটা কৈয়ফত দেয়ার মতো করে জানালেন লি।
পার্কের আরেকটি পেশাদার ম্যাচমেকিং সার্ভিসের পরিচালক ফ্যান ডংফাংয়ের কথাও পাওয়া গেলো একই সুর। প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০টি বিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রমাণস্বরূপ এক বান্ডিল বিয়ের দাওয়াতপত্রও দেখালেন তিনি।
তিনি জানান, তার সন্ধানে বিবাহযোগ্য অনেক নারী আছেন। আসলে সাংহাইয়ে নারীর ‘লেফটওভার’ সংখ্যা বেড়ে গেছে।
২৭ বছর পার হয়ে গেছে এমন শিক্ষিত, অবিবাহিত ও শহুরে নারীদের ক্ষেত্রে চীনে ‘লেফটওভার’ শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
ফ্যান জানান, এসব নারীরা আসলে বেশিই যোগ্য।
চীনে কিন্তু পুরুষের সংখ্যা মোটেই কম নয়। বরং দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, চীনের নারীদের চেয়ে ৩৪ মিলিয়ন বেশি পুরুষ রয়েছে। তবে, তার মানে এই নয় যে, এসব নারী-পুরুষ সহজেই বিয়ে করতে পারবে।
পর্যবেক্ষকরা জানান, চীনের পুরুষদের মধ্যে তাদের চেয়ে কম বয়সের ও কম শিক্ষাগত যোগ্যতার নারীকে বিয়ে করার প্রবণতা রয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে ঠিকঠাক জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়াটা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠেছে। আর এজন্যই জমে ওঠেছে বিয়ের বাজার। সূত্র: সিএনএন
(দিরিপোর্ট২৪/ কেএন/ এমডি/ নভেম্বর ০৪, ২০১৩)