আদিত্য রুপু, দ্য রিপোর্ট : হলিউড-বলিউড-ঢালিউডসহ পৃথিবীর প্রায় সব তারকাকেই তার কাজ নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকতে হয়। আর তারকাটি যদি হন প্রথমসারির কেউ, তাহলে তো দম ফেলারও সুযোগ নেই। এমন অবস্থায় যদি ভক্ত-দর্শকরা তাদের মোবাইল ফোনে পাওয়ার চেষ্টা করে, তবে আশায় গুঁড়েবালি। তারকাদের ফোন করলে কিংবা এসএমএস পাঠালে প্রায়শই সে সবের জবাব মেলে না। কেননা, ব্যস্ততা ও অন্যান্য কারণে তাদের সময়ের মূল্য অনেক বেশি। অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব না হলেও বলিউড তারকাদের অনেকেই পরবর্তী সময়ে জবাব দেন। এ সব জবাব পাঠানোরও রয়েছে অদ্ভুত নানা প্রক্রিয়া। আবার বলিউডে এমন অনেক তারকাও আছেন যাদের ফোনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠালেও ধন্যবাদ জানানোর সময় তাদের নেই। ফোনের কলার টিউন কিংবা নম্বর নিয়েও অদ্ভুত খেয়াল কাজ করে বলিউড তারকাদের মধ্যে। সম্প্রতি বলিউড হাঙ্গামা তারকাদের ফোন নিয়ে চমৎকার কিছু তথ্য দিয়েছে। দ্য রিপোর্টের পাঠকদের জন্য সে সব মজার তথ্য হুবহু তুলে ধরা হল।

অমিতাভ বচ্চন

ফোনে শিষ্টাচারের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছেন বিগ বি অমিতাভ বচ্চন। তাকে ফোন দিলে নিশ্চিতভাবেই জবাব মিলবে। সঙ্গে সঙ্গে না হলেও, বলিউডের কিংবদন্তী এই অভিনেতা দুই-একদিনের মধ্যে ঠিকই কলব্যাক করেন কিংবা ফিরতি এসএমএস পাঠান। এদিকে তার ঠিক উল্টো স্বভাব পেয়েছে ছেলে অভিষেক ও ছেলেবউ সাবেক বিশ্ব সুন্দরী ও অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। তাদের ভক্ত-দর্শকরা মনে করেন, অ্যাশের মধ্যে এক ধরনের হামবড়া ভাব রয়েছে। তাই তিনি কখনোই ফোনের জবাব দেন না। এমনকি কেউ তার ফোনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেও চুপ থাকেন। অভিষেক বচ্চনকে নিয়েও নাকি একই মূল্যায়ন সবার।

শাহরুখ খান

ফোনের জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে বলিউড কিং শাহরুখ খানের অদ্ভুত এক বাতিক রয়েছে। প্রচণ্ড প্রয়োজন থাকলেও শাহরুখকে ফোন দিয়ে কোনো লাভ নেই। নিশ্চিতভাবেই সেটার জবাব আসবে না তার কাছ থেকে। কিন্তু দুই সপ্তাহ পর হয়ত দারুণ একটি এসএমএস পাঠাবেন তিনি। সেখানে লেখা চমৎকার বার্তা পড়ে হাসি ফুটে উঠবে ফোন দেওয়া ব্যক্তিটির মুখে। সবচেয়ে মজার বিষয় হল- বরাবরই মধ্যরাতের পর ফিরতি এসএমএস পাঠান এই অভিনেতা।

শাহরুখ বিশ্বাস করেন সংখ্যার উপর সৌভাগ্য নির্ভর করে। শুধু বিশ্বাসই করেন না, সেই মতো মেনেও চলেন। ‘৫৫৫’ এবং ‘৪০’ সংখ্যার প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আছে শাহরুখের। সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে তার এ কুসংস্কারের মাত্রা এতটাই প্রবল যে, নিজের পাশাপাশি কাছের মানুষদের মোবাইল নম্বরেও এই সংখ্যাগুলোর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন তিনি। স্ত্রী গৌরী খান, ঘনিষ্ঠ বন্ধু করুণা বড়াল থেকে শুরু করে শাহরুখের অফিসের ৮০ জন কর্মচারীর সবার মোবাইল নম্বরেই ‘৫৫৫’ ও ‘৪০’ সংখ্যাগুলো রাখা হয়েছে। শাহরুখের ব্যক্তিগত ই-মেইল ঠিকানায় এবং গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরেও ‘৫৫৫’ সংখ্যাগুলোর দেখা মেলে।

দীপিকা পাডুকোন

টোল পড়া গাল আর মিষ্টি হাসির জন্য সুপরিচিত একের পর এক বক্স অফিসে ঝড় তোলা ছবি উপহার দেওয়া তুমুল জনপ্রিয় তারকা অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে কখনোই নিরাশ হতে হয় না কাউকে। শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও এসএমএস-এর মাধ্যমে অন্তত একটি স্মাইলি ঠিকই পাঠিয়ে দেন তিনি। অন্যদিকে ‘রাম-লীলা’ ছবিতে দীপিকার সঙ্গে অভিনয়ের আগ পর্যন্ত বরাবরই ফোনের জবাব দিতেন রনবীর সিং। কিন্তু ইদানীং তার সেই অভ্যাসে ভাটা পড়েছে। দীপিকার সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়ানোর পর এখন প্রিয়তমার ফোন কল কিংবা এসএমএস-এর জবাব নিয়মিত দিলেও অন্যদের বেশির ভাগ সময়ই ঝুলিয়ে রাখছেন রনবীর। অবশ্য এই জুটির একজন তো ঠিক আছেন- দীপিকা। আপাতত সেই আনন্দেই দর্শকরা নেচে বেড়াচ্ছেন।

প্রিয়াংকা চোপড়া

সাবেক বিশ্বসুন্দরী অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়া বরাবরই তার ফিরতি এসএমএস-এ তার বর্তমান অবস্থান, মনের অবস্থাসহ সুন্দর সুন্দর নানা বার্তা পাঠিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। এ ছাড়াও সব সময় ফোন কল এবং এসএমএস-এর জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন। মিস্টার পারফেকশনিস্ট তারকা আমির খান ও তার স্ত্রী কিরণ রাও ছাড়াও একই অভ্যাস রয়েছে বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী নির্মাতা করণ জোহরের। তবে খুব বেশি অপ্রীতিকর বিষয় হলে এড়িয়ে যান তারা। প্রিয়াংকা এমনিতেই ইমোশনাল হিসেবে পরিচিত ঘনিষ্ঠ মহলে।

ক্যাটরিনা কাইফ

প্রিয়াংকা চোপড়ার মতো ক্যাটরিনা কাইফও এসএমএস কিংবা ফোনের জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সিরিয়াস। কাজের ব্যস্ততার কারণে তৎক্ষণাৎ জবাব দিতে ব্যর্থ হলেও সময় বের করে ঠিকই তিনি জবাব দেন। এমনকি যুক্তরাজ্য, লাস ভেগাস কিংবা বিশ্বের যে প্রান্তেই তিনি থাকুন না কেন কখনোই ফোন দেওয়া ব্যক্তিটিকে নিরাশ করেন না। বারবি ডল খ্যাত বলিউডের প্রথম সারির এই নায়িকা এমনিতেই সবার আদরের। ফোন নিয়ে তার বাড়াবাড়ি না থাকায় দর্শকরা ক্যাটরিনার কোমল হৃদয়েরই দেখা পান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রেজি ফ্যানদেরকে ফোন দিয়ে চমকে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে তার বেলায়।

কারিনা কাপুর

ফোনের প্রতি অতিরিক্ত দুর্বলতা রয়েছে বলিউড তারকা কারিনা কাপুর খানের। নিজের স্মার্টফোন থেকে খুব বেশি সময় দূরে থাকতে পারেন না তিনি। অন্যদিকে কারিনার স্বামী পতৌদির নবাব ও বলিউডি অভিনেতা সাইফ আলী খান তার নাক উঁচু স্বভাবের কারণে দুর্নাম কুড়িয়েছেন। সামনা-সামনি সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বললেও ফোন আলাপের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সৌজন্যবোধও নেই সাইফের ভেতর। বলিউডের কারও নামই নেই তার মোবাইলের ফোনবুকে। কেবলমাত্র কাছের বন্ধুদের ফোনের জবাবই তিনি দেন। এক্ষেত্রেও কারিনা নমনীয়। খুব বেশি ভক্ত-দর্শকদের পাত্তা না দিলেও বলিউডের সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন তিনি। কারিনার ফোন প্রীতি সম্পর্কে প্রায় সবারই জানা।

বিপাশা বসু

কয়েক বছর আগে বাঙালি বংশোদ্ভূত বলিউড অভিনেত্রী বিপাশা বসু অদ্ভুত একটি কলার টিউন ব্যবহার করতেন। তাকে ফোন দিলেই শোনা যেত, ‘হ্যালো, হ্যালো আমি আপনার কথা ঠিকমতো শুনতে পাচ্ছি না। একটু উচ্চৈঃস্বরে কথা বলবেন কী!’ তার কলার টিউন শুনলেই মনে হত, তিনি যেন ফোন দেওয়া ব্যক্তিটির খুব কাছেই আছেন। এখন অবশ্য সেই কলার টিউনটি নেই। বিপাশার এমন আচরণে কেউ কেউ সমালোচনা করলেও অনেকেই ব্যাপারটাকে ফান হিসেবে নিয়েছে। বাঙালি এই ললনার বুদ্ধিদীপ্ত পথচলা জানিয়ে দেয় তার রুচি সম্পর্কে। জানা গেছে, বিপাশার এখনকার কলার টিউনটি বলিউডের গেল বছরের একটি জনপ্রিয় গানের।

উর্বশী রাতেলা

‘সিং সাব দ্য গ্রেট’ ছবির মাধ্যমে গত বছর বলিউডে পা রেখেছেন মডেল ও মিস টিন ইন্ডিয়া খেতাব পাওয়া উর্বশী রাতেলা। তার ফোনের কলার টিউনটি বেশ অদ্ভুত। উর্বশীকে ফোন দিলেই শোনা যাবে, ‘আপনি যে নম্বরে ফোন দিয়েছেন এটা একটা ভিআইপি নম্বর। আপনার ফোন কলটিকে নজরদারি করা হতে পারে। তাই কোনো কিছু বলার আগে সতর্কতার সঙ্গে শব্দ চয়ন করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’ সম্ভবত আজেবাজে ফোন কলের ঝামেলা থেকে রক্ষা পেতেই এমন পন্থা বেছে নিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী এ সুন্দরী। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ার পরও বলিউডের অনেকে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

অজয় দেবগন

ফোন কল কিংবা এসএমএস-এর জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে নাক সিটকানো ভাব রয়েছে তারকা দম্পতি অজয় দেবগন এবং কাজলের মধ্যেও। বিশেষ করে বাসায় থাকলে কখনোই ফোন ধরেন না অজয়। তার মতো কাজলও কেউ ফোন দিল না দিল তা নিয়ে একদমই মাথা ঘামান না। অজয় অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ফোন কলও রিসিভ করেন না বলে শোনা যায়। এ জন্যে তাকে অনেক সময় বিভিন্ন রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে একাধিকবার। একবার এক প্রযোজকের সঙ্গে এই নিয়ে তর্ক বেধে গিয়েছিল। অপেশাদারি আচরণ কারোরই কাম্য নয়।

অন্যান্যরা

বাকিদের মধ্যে মোবাইল ফোন নম্বরে ‘৭৮৬’ সংখ্যাযুক্ত করেছেন বলিউড তারকা সায়রা বানু, টাবু, এ আর রহমান ও ফিরোজ নাদিয়াদওয়ালা। বলিউডের সফল তারকা দম্পতি ঋষি কাপুর ও নিতু কাপুর তাদের মোবাইল ফোন নম্বরেও নিজেদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। শুধুমাত্র একটি সংখ্যা বাদে দুজনের ফোন নম্বর একই। এ ছাড়া বলিউডের অভিনেতা বিবেক ওবেরয়ের পরিবারের সবার মোবাইল ফোন নম্বরেই ‘৭৭৭’ সংখ্যাগুলো ঠাঁই পেয়েছে। অন্যদিকে, বরাবরই তৎক্ষণাৎ ফোন কিংবা এসএমএস-এর জবাব দেওয়ার স্বভাবের কারণে প্রশংসা কুড়িয়েছেন খিলাড়িখ্যাত তারকা অক্ষয় কুমার। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে তিনি প্রতিটি ফোন কল এবং এসএমএস-এর জবাব দেন। ফোনে তার এমন শিষ্টাচার তাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলছে প্রতিনিয়ত।

(দ্য রিপোর্ট/এআর/এইচএসএম/আরকে/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৪)