হরতালে মাঠে নেই ১৮ দলের নেতাকর্মীরা
মাহমুদুল হাসান, দিরিপোর্ট২৪ : কর্মীরা মিছিল, পিকেটিং করেনি। নেতারাও ছিলেন না সংবাদ সম্মেলন ছাড়া কোন কর্মসূচিতে। ১৮ দলের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতালের প্রথমদিন সোমবারে রাজধানীর কোথাও জোটের নেতারা হরতালের সমর্থনে রাজপথে নামেনি।
নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। অল্প কিছু নেতা-কর্মী ছিলেন এখানে। দিনভর কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দপ্তর-সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীমও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
উপস্থিত সাংবাদিকদের রিজভী বলেন, ‘দলীয় কার্যালয় পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। নেতাকর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। শান্তিপূর্ণ মিছিলেও বাধা দিচ্ছে। রাস্তায় বের হলে পুলিশ গুলি করে। লাঠিপেটা করে। তারপরও নেতাকর্মীরা রাস্তায় আছেন। দোকান বন্ধ আছে। গাড়িও রাস্তায় বের হচ্ছে না।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সোমবার বিকালে প্রথম দিনের হরতাল পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত সারা দেশে ১৮ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নিহত হয়েছে ২ জন। গ্রেফতার পাঁচ শতাধিক। আহত ১৮০০ জনের অধিক। মামলা হয়েছে ৮ হাজারের বেশি। ভ্রাম্যমান আদালত বিভিন্ন মেয়াদে ৪ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছে।
‘হরতালে রাজধানীতে ১৮ দলের শীর্ষনেতাদের কোথাও দেখা যায়নি’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘১৮ দলের নেতারা যার যেখানে দায়িত্ব সেখানেই তা পালন করেছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় মিছিল করেছে।’
হরতাল ডেকে মাঠে না থাকার বিষয়ে ১৮ দলীয় জোটভুক্ত একটি দলের নেতা দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বড় রাজনৈতিক দল। তাদের যে ধরনের সাংগঠনিক সক্ষমতা আছে, তাতে হরতালে পিকেটিং করা সহজ। ছোট দল হিসেবে পিকেটিং করে হরতাল পালনের সাংগঠনিক শক্তি আমাদের নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করি। কিন্তু পুলিশের ভয়ে যেখানে বিএনপি-জামায়াত মাঠে নামতে ভয় পায়, সেখানে আমাদের পক্ষে তা আরো কঠিন।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান দিরিপোরট২৪কে বলেন, ‘জনগণ আজকের হরতাল স্বতস্ফূর্তভাবে পালন করছে। তারা ঘর থেকে বের হননি, গাড়ি বের করেননি, দোকান-পাটও খোলেনি। আমরা সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর কালর্ভাট রোডে একটি মিছিল করেছি।’
তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ মিছিলে হামলা চালিয়ে তাদের দুই কর্মীকে আহত করছে।
হরতাল পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি। এখন থেকে হরতালে আমি আমার নিজ এলাকায় থাকব। হরতালের সময় ঢাকায় বাসায় বসে টেলিভিশন আর পত্রিকা পড়ার চেয়ে এলাকায় রাস্তায় থাকা অনেক ভালো।’
তিনি বলেন, ‘হরতালের সমর্থনে পঞ্চগড়ে আমরা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মিছিল করেছি। ডিসি অফিসের সামনে মিছিল করেছি। পুলিশ বাধা দেয়নি। পুলিশকে আগেই বলেছি। যে কারণে পুলিশও বাধা দেয়নি। আমরাও শান্তিপূর্ণ মিছিল করেছি।’
সোমবার রাজধানীতে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। হরতালে জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। তবে এদিন গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার কোন গাড়ি ঢাকা ছেড়ে যায়নি। লঞ্চ, রেল চলাচল ছিল স্বাভাবিক। অফিস-আদালত খোলা ছিল। পরীক্ষা স্থগিত করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।
(দিরিপোর্ট২৪/এমএইচ/এইচএস/এমডি/নভেম্বর ০৪, ২০১৩)