দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নে এ অর্থ দিচ্ছে সংস্থাটি।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সোমবার বিকেলে পৃথকভাবে এ ঋণচুক্তি দু’টি স্বাক্ষরিত হয়।

এতে সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মোহাম্মদ মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেন্স জাট স্বাক্ষর করেন। এ সময় ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেন্স জাট বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য উচ্চাভিলাষী হলেও অসম্ভব নয়। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি বজায় রাখা। শিগগিরই দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ শহরে বাস করবে তারাই প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি। কিন্তু শহরের স্থানীয় প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ সেবাদান করতে পারছে না। এ জন্য জনগণকে কার্যকর শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে উৎপাদনমুখী করে তুলতে হবে।’

ইআরডির সচিব মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘নাগরিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রকল্প দু’টি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।’

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মানসম্মত উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত হিসাবে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (এইচইকিউইপি) নামের এ প্রকল্পটিতে শুরু থেকেই বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করে আসছিল। এটির সফল বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা (১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) দিচ্ছে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নেগোসিয়েশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের কারণে একনেক স্থগিত ছিল। ফলে প্রকল্পটি অনুমোদন না হওয়ায় ঋণ চুক্তিসহ আন্যান্য প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়।

সহজ শর্তের এ ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১০ বছরের বর্ধিত মেয়াদসহ মোট ৪০ বছর। এ ক্ষেত্রে বার্ষিক সার্ভিস চার্জশূন্য দশমিক ৭ শতাংশ এবং কমিটমেন্ট ফি শতকরা দশমিক ৫ শূন্য শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় মূল প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৬৮১ কোটি ৪ লাখ টাকা (এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৮২ কোটি ৫৬ লাখ এবং বিশ্বব্যাংকের ৫৯৮ কোটি ৪৮ লাখ) ব্যয় ধরা হয়েছিল। বাস্তবায়নের সময় ছিল ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্পটি ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রথম অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর জনবল সংখ্যা পরিবর্তন ও কয়েকটি নতুন অঙ্গ যোগ হওয়ায় ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী আনা হয়। ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে ডলার বিনিময় হারের পরিবর্তনের কারণে প্রকল্প ব্যয় ও বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধন করা হয়। এ সময় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। ২০১৩ সালের ৭ মে এ প্রস্তাব একনেকে অনুমোদন লাভ করে। এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছিল ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমানে বিশ্বব্যাংক ১২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার অর্থায়নে রাজি হয়। এ জন্য এটির তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়। সম্প্রতি এ প্রস্তাব অনুমোদন দেয় একনেক।

বর্তমানে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ কোটি ৯২ লাখ এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

অন্যদিক, মিউনিসিপ্যাল গভারন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ।

এর আগে বিশ্বব্যাংক শহর এলাকার মৌলিক নাগরিক সুবিধা প্রদান এবং পৌর প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য মিউনিসিপ্যাল সার্ভিসেস প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করেছিল। যা ২০১২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হয়েছে। এ প্রকল্পে রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশন এবং ১৭টি পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাশাপাশি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ৪টি বন্যা পরবর্তী পুর্নবাসনের আওতায় ১৫০টি পৌরসভায় সহায়তা প্রদান করা হয়েছিল।

এ ছাড়া দেশব্যাপী সিটিকরপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর দক্ষতা বাড়ানো জন্য এলজিইডিতে মিউনিসিপ্যাল সাপোর্ট ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হয়েছিল। এ সময় বিএমডিএফ নামে একটি ননব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়, যা স্থানীয় পর্যায়ে পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনগুলোকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ঋণ দিয়ে সাহায্য করছে। ওই প্রকল্পের সফলতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আবারও একটি প্রকল্প নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হলে বিশ্বব্যাংক এতে সাড়া দেয়। পরবর্তী সময়ে মিউনিসিপ্যাল গভারন্যান্স সার্ভিসেস প্রকল্পে অর্থায়নের সম্মতি দিয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এনডিএস/আরকে/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪)