আরবি হরফে বাংলা লিখতে ভাষা কমিটি
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভাষা প্রশ্নে অব্যাহত আন্দোলনের মুখে খাজা নাজিমুদ্দিনের উদ্যোগে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে আরবি হরফে প্রচলনের ব্যাপারে একটি প্রস্তাব দেয়। এর আগে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফজলুর রহমান সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে আরবি বর্ণমালায় বাংলা লেখার প্রচেষ্টা শুরু করেন। এর জন্য তিনি আমলাতন্ত্র ও ধর্মীয় কয়েকজন ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগান। সে সময় বেনামে কিছু বইও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু জনগণের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
পূর্ব বাংলা সরকার ১৯৪৯ সালের ৯ মার্চ মাওলানা আকরম খাঁকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের একটি ভাষা-কমিটি গঠন করে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো দু’একজন ভাষাবিদ থাকলেও এ কমিটির অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন সরকারি আমলা, মন্ত্রী ও পরিষদ সদস্য। এ কমিটির দায়িত্ব ছিল- বাংলা ব্যাকরণ ও বানান সহজীকরণ, সংস্কার ও প্রমিতকরণ, নতুন শব্দ ও বাক্যবন্ধ গঠন-প্রণালী উদ্ভাবন এবং ইসলামী সংস্কৃতির সঙ্গে ভাষার সমন্বয় সাধনে পরামর্শ দান।
এই কমিটি কাঠামোগতভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হলেও বাংলা ভাষা সংস্কারে মোটামুটি গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করে। তারা ১২শ’ প্রশ্নপত্র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে মতামত গ্রহণ করে। এ ছাড়াও এ সব প্রশ্ন নিয়ে যে সমস্ত বিতর্ক পুস্তক ও খবরের কাগজে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাকেও কমিটি বিবেচনার আওতাভুক্ত করা হয়। এ সময়ে ব্যক্তিগত মতামত সম্বলিত অসংখ্য চিঠি আসে এ কমিটির কাছে। এগুলোকেও বিবেচনা করে দেখা হয়।
১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসে পার্লামেন্টে আরবি হরফে বাংলা লেখার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন দানাবেঁধে ওঠে।
বাংলাকে আরবি হরফে লেখার সুপারিশ নিয়ে সরকারের যুক্তি ছিল বরাবরের মতো জাতীয় ঐক্য। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্লামেন্টে বলেন ‘The board is of the opinion that in the interest of national unity and solidarity and the rapid advancement of general education in Pakistan, it is necessary to have all the regional languages of Pakistan written in the same script; the Arabic script was most useful for this purpose…’
ভাষা-কমিটিতে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে আরবি হরফ প্রচলন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ১১/১ ভোটে বাতিল হয়ে যায়। এই কমিটি পৌরাণিক কিছু শব্দের ব্যবহারের পরিবর্তে নতুন কিছু শব্দের সুপারিশ করে। সুপারিশ করা হয় যথাসম্ভব সংস্কৃত শব্দ পরিহার করে বাংলা বর্ণমালাতে সহজ বাংলা শব্দের ব্যবহার। ১৯৫০ সালের ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন তৈরি করে। কিন্তু এ সব সুপারিশ ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত বস্তাবন্দি থাকে। ১৯৫৮ সালে যখন রিপোর্টটি প্রকাশ হয় ততদিনে ভাষা-প্রশ্নে জনগণের আকাঙ্ক্ষা, দাবি ও অধিকার অনেক বেশি প্রগতিশীল স্তর অতিক্রম করে গেছে। মূলত এর মাধ্যমে আইয়ুব খান ভাষা-প্রশ্নটিকে পেছন দিকে টেনে নিতে চেয়েছিলেন।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/আরকে/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪)