‘ভাবছি ছোট ছোট লেখা লিখব’
শাহীন আখতার প্রায় দুই দশক ধরে গল্প-উপন্যাস লিখছেন। সম্পাদনা করেছেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য-সঙ্কলন। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘তালাশ’-র জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪১০ পুরস্কার পেয়েছেন। বইটির ইংরেজি তরজমা ‘দ্য সার্চ’ দিল্লির প্রকাশনা হাউস জুবান প্রকাশ করেছে ২০১১ সালে। শাহীন আখতারের ছোটগল্পের বই পাঁচটি। ঢাকা ও কলকাতা থেকে প্রকাশিত তার সম্পাদিত বই ‘সতী ও স্বতন্তরা- বাংলাসাহিত্যে নারী’ (তিন খণ্ড) ও ‘জানানা মহফিল- বাঙালি মুসলমান লেখিকাদের নির্বাচিত রচনা’ (১৯০৪-১৯৩৮)। তিনি কাজ করছেন মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রে। দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওয়াহিদ সুজন
এবার মেলায় কী কী বই আসছে? কোন প্রকাশনী বের করছে?
একটা উপন্যাসই প্রকাশিত হচ্ছে- ‘ময়ূর সিংহাসন’। প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন।
প্রকাশিত বই সম্পর্কে বলুন?
বই কী নিয়ে লেখা হয়েছে, তা জানার জন্য উপন্যাসটা পড়ার বিকল্প নাই। সোজা কথায় ‘ময়ূর সিংহাসন’ মোগল শাহজাদা সুজার রাজমহল থেকে আরাকানে (বর্তমান মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ) পলায়নের কাহিনী। সেই আমলে আরাকানরাজের জলসেনা পর্তুগিজরা এ অঞ্চলে তাণ্ডব চালাচ্ছিল। তারা নারী-পুরুষ-শিশু ধরে নিয়ে বেচে দিত। তাতে হিস্যা ছিল আরাকানরাজের। মোগল-আগ্রাসন ঠেকাতেই মূলত এ তৎপরতা। তা ছাড়া তার রাজকোষ ফুলে-ফেঁপে উঠেছে এ সুবাদে। ধান আর ক্রীতদাস- এ দুটি ছিল তখনকার আরাকান রাজ্যের আয়ের মূল উৎস। মগ-পর্তুগিজদের তাণ্ডব ঠেকাতে তেমন কোনো পদক্ষেপই নেননি শাহ সুজা। অথচ তিনি বাংলা প্রদেশের সুবেদার ছিলেন বিশ বছর। অবাক কাণ্ড, শাহ সুজা যখন আওরঙ্গজেবের সেনানায়ক মির জুমলার কাছে পরাজিত হয়ে আরাকানে আশ্রয় নেন, তার ভাগ্যহত প্রজা বা প্রজার বংশধরেরা, যারা হালে রোহিঙ্গা নামে পরিচিত, তারা শাহ সুজাকে আরাকানের সিংহাসনে বসাতে পাঁয়তারা করে। ক্যু-এর মতো একটা কিছু হয় তখন ওখানে। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নথিতে এ নিয়ে কিছু কথা আছে। কবি আলাওল তার ‘সিকান্দরনামা’ কাব্যে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। ‘ময়ূর সিংহাসন’ উপন্যাসেও আরাকানে শাহ সুজার সপরিবারে হত হওয়ার একটি কারণ হিসেবে এর উল্লেখ আছে।
বইটি প্রকাশে কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা থাকলে বলুন?
প্রথম আলো ঈদসংখ্যা ২০১২-তে ‘ময়ূর সিংহাসন’-র অংশবিশেষ ছাপা হয়। প্রথমা’র জাফর আহমেদ রাশেদ এরপর কয়েকবার উপন্যাসটি শেষ করে জমা দেওয়ার জন্য তাগাদা দিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১২ শেষ হয়ে ২০১৩-র শেষ প্রান্ত। ততদিনে রাশেদও চেয়ে চেয়ে ক্ষান্তি দিয়েছে, আমার লেখা শেষ হল। আমিই ফোন করে জানালাম রাশেদকে।
বইকে কীভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বলে মনে করেন?
প্রকাশক, বইবিক্রেতা, সাহিত্য সমালোচক, সাহিত্যপাতার সম্পাদক (প্রিন্ট, অন-লাইন)- তারাই পারেন যত দূর সম্ভব বইটা পাঠকের ধারে পৌঁছে দিতে। এখন লেখককে প্রচারের কাজ অনেকখানি করতে হয়। আমার জন্য তা বে-আরামের। করছি কিছুটা, তবে মন থেকে সায় পাই না। বইমেলার স্টলে বসতে ইচ্ছা করে না।
মেলায় বই কেনার পরিকল্পনা নিয়ে বলুন?
ঘরে তো বই আঁটে না। বরাবরের মতো ক্যাটালগ দেখেই বই কিনব। পছন্দের বই।
বই মেলার স্থান সম্প্রসারণের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
বইমেলার পরিসর বাড়ানো জরুরি ছিল। মেলায় এখনও যাই নাই। বলতে পারছি না- চেনা বইমেলা অচেনা লাগবে কি না।
লেখালেখির ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
বিশাল ক্যানভাস ঝুলিয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বুঁদ হয়ে থেকেছি। সামনে দিয়ে হাতি গেলেও দেখতে পায় নাই। এখন ভাবছি ছোট ছোট লেখা লিখব- পাঠক-ফ্রেন্ডলি! খোদা যদি তৌফিক দেন।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/আরকে/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪)