ক্রিকেটের জয় হোক তবে...
দেশের মাটিতে তিন ওয়ানডের সবকটিতে নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে বাংলাদেশ এখন আনন্দে ভাসছে। তবে রাজনৈতিক আবহাওয়ায় এ আনন্দ অনেকটাই মিডিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাংলাদেশের সাফল্যকে মিডিয়া নানাভাবে চিহ্নিত ও চিত্রিত করছে। অতি উৎসাহীরা ক্রিকেট পরিভাষা হোয়াইটওয়াশকে বাংলাওয়াশ নামকরণ করেছে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অতি সাবধানী সমর্থকরা এখন অনেক বড় স্বপ্নের কথা বলছেন। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, জয় হোক বাংলাদেশের ক্রিকেটের।
ক্রিকেটের উন্নতি বাংলাদেশকে ক্রীড়াজগতের একটি শাখায় অচিরেই ভালো অবস্থান করে দেবে, এই আশাবাদের পাশাপাশি বিশ্ব ক্রীড়াজগতকে মন থেকে মুছে ফেললে চলবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিশ্ব ক্রীড়াজগত অনেক বিস্মৃত নানা শাখা প্রশাখায় পল্লবিত। বিশ্ব পরাশক্তিগুলো বন্দুক কামান নিয়ে আজ আর মুখোমুখি নয়। তারা মুখোমুখি হয় তাদের ক্রীড়াযোদ্ধাদের নিয়ে। কোন দেশ কতখানি পরাক্রমশালী তা তারা প্রকাশ করতে চায় খেলার মাঠে। প্রতি চার বছর পর পর অলিম্পিক ময়দানে ক্রীড়াযোদ্ধারা দেশের হয়ে লড়াই করে। সোনা-রোপা-ব্রোঞ্জের সে লড়াইয়ে বিশ্ব ভাগ হয়ে যায়। বিশ্বনাগরিক হিসেবে আমরা এখনও সেই মহাযুদ্ধের দূরবর্তী দর্শক মাত্র।
এত বড় যে ফুটবল জগত সেখানেই বা আমাদের অবস্থান কোথায়? ফুটবল একসময় ছিল এদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় একটি খেলা। গ্রামে-গঞ্জে ফুটবল নিয়ে ছিল মাতামাতি। শিশু থেকে বৃদ্ধ হাজির হতো ফুটবল খেলা দেখতে। প্রতিটি জেলায় হতো ফুটবল লিগ। রাজধানী ঢাকার লিগ ও কাপ নিয়ে ছিল দেশব্যাপী টানটান উত্তেজনা। ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের একটি বড় সময় ধরে আমাদের ফুটবল ছিল উপমহাদেশীয় মানের। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা তাকে অন্তত এশীয় মানে দেখার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু কেন জানি না আজ আমাদের ফুটবল খেলায় নেমে এসেছে হতাশা। হকির অবস্থা আরও শোচনীয়। প্রতি বছর গ্রাম-গঞ্জ থেকে যে শত শত ফুটবল ও অন্যান্য খেলার খেলোয়াড় বেরিয়ে আসতো, তাও বন্ধ হতে চলেছে। এর ফলে যুব সমাজে বাসা বাধছে নানান ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
ক্রীড়ার একটি শাখাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে গিয়ে অন্য উজ্জ্বল শাখাগুলো অবহেলার স্বীকার হোক তা নিশ্চয় কারও কাম্য নয়। আমরা আশা করবো, সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এ বিষয়টির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। আমরা আরও আশা করবো, শুধু ক্রিকেট-ফুটবল নয়, ক্রীড়াজগতের অন্য সম্ভাবনাময় শাখা-প্রশাখায় স্থান করে নেওয়ার জন্য আমরা উদ্যোগী হবো।