দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টিকে মন্ত্রিসভায় রেখে সংসদের প্রধান বিরোধী দল করায় সরকারের প্রকৃতি নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) রুস্তম আলী ফরাজী।

দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে সোমবার পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে রুস্তম আলী এ প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের মন্ত্রিপরিষদে জাতীয় পার্টির সদস্য রয়েছেন। আবার সংসদের প্রধান বিরোধী দলও করা হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। একটি দল সরকারের ও বিরোধী দলে থেকে কীভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। সরকারের কোনো জনবিরোধী কর্মকাণ্ডে দলের মন্ত্রীদের অবস্থান কী হবে তা স্পষ্ট নয়। আবার আইন পাসের ক্ষেত্রেও জটিলতা সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে এটা স্পষ্ট করতে হবে বর্তমান সরকার মহাজোট সরকার, নাকি আওয়ামী লীগের সরকার নাকি ঐক্যমতের সরকার? আজ সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত নেই। তাহলে তার কাছেই এ প্রশ্নটি করতাম।’

রুস্তম আলী বলেন, ‘বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রে এমন নজির নেই যে একটি দল সরকারেও থাকে আবার বিরোধী দলেও থাকে। এটা সংবিধান পরিপন্থী।’

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে কোন অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে একটি দল সরকার ও বিরোধী দলে একই সঙ্গে থাকতে পারবে না। আমার বন্ধু (রুস্তম আলী ফরাজী) যে কথা বলছেন তা হল সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আইন পাস নিয়ে। আর এ ব্যাপারে উনার চেয়ে আমরা বেশি সচেতন। সরকার যদি কোনো জনকল্যাণমূলক কাজ করে তাহলে আমরা তার সমর্থন করব। এ ধরনের বিল পাসের ক্ষেত্রে বিরোধী দলও সরকারকে সহায়তা করবে। কিন্তু সরকার যদি জনগণের ক্ষতি হয় এমন কিছু করে তাহলে আমরা তার বিরোধিতা করব।’

চুন্নু বলেন, ‘জনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে শুধুমাত্র বিরোধিতায় না, আমরা প্রতিবাদ করব। প্রয়োজনে সংসদ থেকে ওয়াকআউটও করব। আবার ফিরে আসব, তাতেও যদি সরকার এ সব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত না থাকে তাহলে জাতীয় পার্টি সদস্যরা মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগও করতে দ্বিধাবোধ করবে না।’

চুন্নু বলেন, ‘বর্তমানে ইসরাইল ও জার্মানিতে এ ধরনের সরকার রয়েছে, যেখানে বিরোধী দলের অংশগ্রহণে সরকারও গঠিত হয়েছে। দেশের বিশেষ পরিস্থিতি ও বিশেষ কারণে কখনও কখনও কোয়ালিশন বা ঐকমত্যের সরকার গঠন করতে হয়। আমাদের ভেবে দেখা দরকার ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কোন পরিস্থিতিতে হয়েছে। যখন দেশে গণতন্ত্র থাকবে কী থাকবে না, সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা থাকবে কী থাকবে না তেমন একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি রওশন এরশাদের নেতৃত্বে এবং দলের চেয়ারম্যান হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনে এসেছে। নির্বাচন শেষে সংসদ নেতা জাতীয় পার্টিকে সরকারের থাকার আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে আমরা সরকারে এসেছি।’

মুজিবুল হক বলেন, ‘এর আগে আমরা বিরোধী দল দেখেছি, যে দলের নেতা পাঁচ বছরে মাত্র ১০ দিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন। এমন বিরোধী দলের দরকার কী। আমরা বিরোধী দলে আছি। আমরা কখনও সংসদ বর্জন করব না। আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করব সংসদে উপস্থিত থেকে। সরকারের বিরোধিতা করে ওয়াকআউট করব কিন্তু সেটা লাগাতার সংসদ বর্জন নয়।’

(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ-এইচআর/এনডিএস/সা/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪)