হরতালে সহিংসতায় নিহত ৪
দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক: ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিন সোমবার সহিংসতায় চারজন নিহত হয়েছেন। লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ছাত্রদলকর্মী, নাটোরের গুরুদাসপুরে এক শ্রমিক, নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় পথচারী ও চট্টগ্রামে একজন নিহত হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ অর্ধশতাধিক। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর :
লালমনিরহাট: পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পাটগ্রামের পৌর সদরের সোহাগপুর এলাকায় দু’টি স্থানে সকাল ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা সমবেত হন। একপর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তারা পরস্পরের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছোঁড়ে। এতে নাসির হোসেন (২২) নামে এক ছাত্রদলকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ নাসিরকে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পি কে দাস জানান, গুলিবিদ্ধ নাসির মারা গেছেন। এ সংঘর্ষে পুলিশ কর্মকর্তাসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন।
নিহত নাসির হোসেন পাটগ্রাম পৌরসভার সোহাগপুর এলাকার মন্টু মিয়ার ছেলে। তিনি পৌর ছাত্রদলকর্মী বলে নিশ্চিত করেছেন পৌর বিএনপির সভাপতি ছালাউজ্জামান ওপেল।
পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান জানিয়েছেন, নিহত নাসির পৌর ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক। তার বাড়ি পৌর সদরের সোহাগপুরে।
নাটোর :জেলার গুরুদাসপুর উপজেলায় পিকেটারের হামলায় ইসাহাক মোল্লা (৪২) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন কয়েকজন শ্রমিক। গুরুদাসপুরের আঁড়মারি সেতুর কাছে বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইসাহাক সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বায়েজ উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে ৬টার দিকে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষি শ্রমিককে নিয়ে একটি মিনিট্রাক সিরাজগঞ্জ থেকে নাটোরের দিকে যাচ্ছিল। পথে নয়াবাজার এলাকায় হরতাল সমর্থকরা ঢিল ছুড়ে ট্রাক থামানোর চেষ্টা করে। এ সময় পিকেটারের ইটের আঘাতে ইসাহাক মোল্লা গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহত ইসাহাককে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সেখানেই মারা যান তিনি।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।’
চট্টগ্রাম : হরতাল চলাকালে সকাল ১০টার দিকে পিকেটারদের ধাওয়ায় যাত্রীবাহী একটি টেম্পু উল্টে মো. জাকির (৩০) নামে তৈরি পোশাক কারখানার এক কর্মকর্তা নিহত হন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক হামিদুর রহমান জানান, কালুরঘাট কর্মস্থলে যাওয়ার সময় চলন্ত টেম্পুটিকে পিকেটাররা ধাওয়া দিলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এটি উল্টে যায়। এতে ওই টেম্পুতে থাকা যাত্রী মো. জাকির গুরুতর আহত হন।
পুলিশ আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর দেড়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
নেত্রকোনা :জেলার কেন্দুয়ায় হরতালকারীদের কাটা গাছের চাপায় আব্দুস সালাম (৪০) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছে। এ সময় তার ছেলে গুরুতর আহত হয়। আহত শিশুটিকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে ওই সড়কে হরতাল সমর্থকরা রাস্তা অবরোধের জন্য গাছ কাটছিল। এ সময় পথচারী সালাম তার ছেলেকে নিয়ে গাছের নিচ দিয়ে হেটেঁ যাচ্ছিলেন। হঠাৎ গাছের একটি ডাল তাদের ওপর পড়লে ঘটনাস্থলেই সালামের মৃত্যু হয় এবং শিশুটি গুরুতর আহত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অবরোধের জন্য পিকেটাররা গাছ কাটছিল কিনা তা আমরা সঠিকভাবে জানতে পারেনি।’
এদিকে হরতালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া আরও ২১ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) আবু ইউসুফ বলেন, ‘সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন এলাকায় হরতালে হাতবোমা বিস্ফোরণ, যানবহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে একাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ১০ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত দণ্ড দিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফয়সাল মাহমুদ (১৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির কর্মী ইকবাল হোসেন (২০) এবং তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের কর্মী মোজাম্মেল হোসেনকে (২০) চারটি হাতবোমাসহ গ্রেফতারের পর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।’
এর আগে রবিবার রাতে শ্যামপুর বাজার এলাকায় একটি অটোরিকশায় আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী রহিমকে(৩০) চারটি ককটেলসহ আটকের পর তাকেও একই দণ্ডে দণ্ডিত করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়াও আরও ৬ জনকে ডিএমপি এলাকায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছ।
(ওএসআর/এনডিএস/নভেম্বর ০৪,২০১৩)