গানের সুরে ইঁদুর দমনের প্রস্তাব
মতিনুজ্জামান মিটু, দ্য রিপোর্ট : গানের সুরকে কাজে লাগিয়ে ইঁদুর দমনের পদ্ধতি উদ্ভাবনের প্রস্তাব করেছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক সরকার।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা’র দ্বিতীয় দিন সোমবার বিকেলে শেষ সেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বের আলোচনায় এ প্রস্তাব করেন তিনি।
গল্পের সেই হ্যামিলনের বংশীবাদকের সুরের মুর্ছনায় ইঁদুর দমনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে ইঁদুর দমন করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করা যায় কিনা- তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’
ব্রি মিলনায়তনে পড়ন্ত বিকেলে ইঁদুর দমন নিয়ে উপস্থিত বিজ্ঞানীদের মধ্যে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। ওই প্রস্তাবের জবাবে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সামিউল হক বলেন, ‘বক্কর ভাই যদি সুরকার ও গীতিকার জোগাড় করতে পারেন তবে আমরা বাজনা বাজিয়ে দেব।’
ইঁদুর ও পাখি ক্ষেতের ফসল এবং বাড়ি-ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র রক্ষার ক্ষেত্রে অনেককাল ধরে হুমকি হয়ে আছে। প্রাণবন্ত আলোচনায় এ সময় এক বিজ্ঞানী একটি ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘পুচ্ছ কেটে সেলাই করে ছেড়ে দিলে ওই ইঁদুরটি ৮-১০টি ইঁদুরকে কামড়ে মারে।’
এ কথা খণ্ডন করে অপর এক বিজ্ঞানী বলেন, ‘কামড় দেয় তবে তাতে ইঁদুর মরে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
এ আলোচনার প্রতিক্রিয়ায় ড. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইঁদুর ধরে পুচ্ছ কেটে দেওয়ার বিষয়টি অমানবিক।’
এ বক্তব্য খণ্ডন করে অপর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘মেরে ফেললে অমানবিক হয় না পুচ্ছ কাটলে অমানবিক হবে কেন? ইঁদুর মেরে লেজ এনে দিলে পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে অনেকে অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন।’
আলোচনার সূত্র ধরে শস্যমান ও পুষ্টি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান ড. মোহম্মদ আলী সিদ্দিকী ইঁদুর নিধন কর্মসূচির সমালোচনা করে বলেন, ‘মানুষ আশরাফুল মাকলুকাত। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি ধ্বংস করতে পারে না। তাই ইঁদুর মারা ঠিক হচ্ছে না। ইঁদুর মারলে আমরা বাঁচব না। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ইঁদুরের প্রয়োজন রয়েছে। এখন খরচ করে ইঁদুর মারবেন। আবার এক সময় টাকা খরচ করে ইঁদুর ফিরিয়ে আনতে হবে। ইঁদুর আমাদের জীববৈচিত্র রক্ষা করে। তাই ইঁদুর মারা যাবে না। ইঁদুরকে ম্যানেজ করতে হবে।’
বিজ্ঞানীদের এ আলোচনায় আরও উঠে আসে দেশ থেকে প্রায় পেঁচা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। আলোচনায় তুলে ধরা হয়, পেঁচা ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করত। এ বিষয়ের আলোচনায় এভাবে সমাপ্তি টানেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সামিউল হক। তিনি বলেন, ‘ইঁদুর নিধন কর্মকাণ্ডের আমিও একজন সমালোচক।’
তিনি বলেন, ‘ইঁদুর নিধন করে ফেললে জীববৈচিত্র্যের সাইকেলিক অর্ডারের কোনো এক জায়গা ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তাতে মানুষের জীবনের ক্ষেত্রে মহাবিপর্যয় নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’
কর্মশালার এ সেশনের সভাপতিত্ব করেন ব্রি’র প্রাক্তন বিজ্ঞানী ড. আবু তাহের মিয়া।
এ ব্যাপারে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্র উপস্থাপন ও স্বাগত বক্তব্যে ব্রি’র মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘ইঁদুর ও পাখি ক্ষেতের ফসলের শতকরা ৭ ভাগ ও ঘরের জিনিসপত্রের শতকরা ৩ ভাগ ক্ষতি করে।’
(দ্য রিপোর্ট/এম/এনডিএস/সা/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪)