কাওসার আজম, দ্য রিপোর্ট : রাজধানীর লালবাগ কেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎবিভ্রাটের ঘটনার তদন্ত কাজ শেষ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট লোক না থাকায় সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত টিম। এমনটাই জানিয়েছেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান এ এস এম মনজুরুল এহসান।

এদিকে এ প্রতিবেদন কার কাছে জমা দেওয়া হবে তা নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লায় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎবিভ্রাটের ঘটনায় ডিপিডিসি ১০ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ শো’র উদ্বোধন করেন।

বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে বিদ্যুৎবিভ্রাট ঘটেছিল নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে বা দায়িত্ব অবহেলার কারণে এটা হয় তা তদন্তে ওই দিনই ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক এ এস এম মনজুরুল এহসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়। ডিপিডিসির পাশাপাশি একাধিক সংস্থাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে।

ডিপিসিরি বহিষ্কৃত কর্মকর্তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম (নির্বাহী প্রকৌশলী নারিন্দা, ফজলুল করিম (নির্বাহী প্রকৌশলী গ্রিড দক্ষিণ-২), শেখ মোহাম্মদ জিয়াউল হাসান (নির্বাহী প্রকৌশলী লালবাগ), মো. মহিউল আলম (নির্বাহী প্রকৌশলী স্বামীবাগ), মোসাহেদুল হক (ডিউটি অফিসার উপ-সহকারী প্রকৌশলী নারিন্দা), আব্দুল হাকিম (অভিযোগ সুপারভাইজার নারিন্দা), লুৎফর রহমান (সুপারভাইজার স্বামীবাগ), আমির হোসেন (উপ-সহকারী প্রকৌশলী গ্রিড নারিন্দা), সাইদ আহমেদ (উপ-সহকারী প্রকৌশলী গ্রিড নারিন্দা), রকিবুল হাসান (সহকারী প্রকৌশলী ডিউটি অফিসার স্বামীবাগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ)।

সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তদন্ত টিমের প্রধান এ এস এম মনজুরুল এহসানের সঙ্গে মুঠোফোনে দু’বার কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তদন্ত কী পর্যায়ে রয়েছে- জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘তদন্ত রেডি, জমা দেব লোক তো পাচ্ছি না। কারণ এখন অফিস টাইম পার হয়ে গেছে।’ তদন্ত রিপোর্ট ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) চেয়ারম্যান ও এমডির কাছে জমা দেওয়ার কথা কিনা-জানতে চাইলে তিনি শুধু বলেন, ‘হ্যাঁ।’ তদন্তে অভিযুক্তদের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে আমরা জমা দেই, তারপর সব জানতে পারবেন। এর আগে বলার নিয়ম নেই।’ এটা মঙ্গলবার জমা হবে কিনা- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ।’

এর আগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তদন্তের বিষয়ে কথা হয় মনজুরুল এহসানের সঙ্গে। তখন তিনি বলেন, ‘রাতেই হয়ত জমা দেওয়া হবে। ঘণ্টা ২-১ পরে ফোন দিলে জানতে পারবেন।’

এ বিষয়ে সোমবার রাতে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. নজরুল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত এখনও শেষ হয়নি, চলছে।’ মঙ্গলবার জমা দেওয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, হতে পারে।

এর আগে রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। তদন্ত এখনও চলছে।’ কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো বলেছিলাম আজকের (রবিবার) মধ্যে দিতে। অপেক্ষা করছি, দেখা যাক। জমা হলে জানতে পারবেন।’

তবে তদন্তের ব্যাপারে কোনো কিছুই জানেন না বিপিডিসির চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তাপস কুমার রায়। তদন্ত এখন কোন পর্যায়ে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’

এটা তো (তদন্ত রিপোর্ট) আপনার কাছে জমা হবে তাই না? উত্তরে তিনি বলেন, ‘না’। তদন্ত সচিবের কাছে জমা হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিপিডিসির গঠিত তদন্ত টিমের সদস্যরা গত শনিবার লালবাগস্থ ডিপিডিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযুক্তদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান চলাকালে ডিপিডিসির লালবাগ অঞ্চলে যারা ওই সময় দায়িত্ব পালন করছিলেন তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় জানতে চেয়েছেন তদন্ত কমিটি ও একাধিক সংস্থা।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এনডিএস/সা/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪)